রিসার্চ অ্যানালিসিস উইং (র)-এর সদস্য সন্দেহে ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তা কুলভূষণ যাদবের ফাঁসির নির্দেশ নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ফের সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়েছে। সোমবারই পাকিস্তানের সেনা আদালত কুলভূষণকে চরবৃত্তি, বালোচিস্তানে সন্ত্রাস ছড়ানোসহ একাধিক অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা করে।
এরপরই কুলভূষণকে ফাঁসির নির্দেশের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। এমনকি দেশটির সংসদেও সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি একজোট হয়ে পাকিস্তানের সিদ্ধান্তের নিন্দায় সরব হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, এই বিষয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মোদী সরকারের কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এবং সাবেক ভারতীয় নৌ-সেনা কর্মকর্তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা উচিত। কেন্দ্রের তরফেও জানানো হয়েছে কুলভূষণ যাতে সুবিচার পায় তা নিশ্চিত করবে সরকার।
কুলভূষণকে সাজা দিলে পাকিস্তানকে তার ফল ভোগ করতে হবে বলে মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের পরাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এদিন রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে সুষমা বলেন, কুলভূষণ অবৈধ কাজ করেছেন, পাকিস্তানের কাছে এমন কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই। এই ঘটনাকে পূর্ব-পরিকল্পিত হত্যার চেষ্টা বলেও মন্তব্য করেন সুষমা। এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে দুই দেশের সম্পর্কে তার প্রভাব পড়বে এবং পাকিস্তানকে তার ফল ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি চড়ান সুষমা। কুলভূষণকে বাঁচাতে ভারত সরকার তার সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করবে বলেও জানান তিনি। বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গেও কথা বলা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে বিষয়টি নিয়ে সরব হন ভারতের স্বরাষ্টমন্ত্রী রাজনাথ সিং। লোকসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজনাথ সিং বলেন পাক এজেন্সিগুলি কুলভূষণকে অপহরণ করে, চর হিসাবে তাকে দেখিয়ে তার বিচার করে তারা। এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা সকলে এই ঘটনায় কুলভূষণের পাশেই রয়েছি। এই অবস্থায় যেভাবে সম্ভব কুলভূষণকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হবে। তার প্রশ্ন কুলভূষণের বৈধ পাসপোর্ট ছিল, তবে কিসের ভিত্তিতে তিনি চর হতে পারেন?
এদিন লোকসভায় কুলভূষণ ইস্যুতে সরকার পক্ষের সমালোচনা করে কংগ্রেসসহ বিরোধী সাংসদরা। লোকসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেস সাংসদ মল্লিকার্জুন খারগে বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী (মোদি) পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠক করছেন, বিয়েতে যোগ দিচ্ছেন, এখন কেন কোনও বৈঠক নয়? সরকার যদি যাদবের সহায়তা করতে অসমর্থ হয়, তবে সেটা এই সরকারের দুর্বলতা।
অন্যদিকে কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরও জানিয়েছেন, 'মোদী সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক স্তরে গিয়ে এর নিষ্পত্তি করা।' বিজেপি সাংসদ সুব্রাম্মনিয়াম স্বামী দাবি জানিয়েছেন, 'পাক সরকার যদি কুলভূষণকে মৃত্যুদণ্ড দেয় তবে ভারত সরকারেরও উচিত বালোচিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা দেওয়া।'
পাশাপাশি দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তান হাই কমিশনার আবদুল বাসিতকে সমন করে পাকিস্তান আদালতের বিচারকে প্রহসন বলে মন্তব্য করেছে ভারত।
একইসঙ্গে, কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশের প্রতিবাদে পাকিস্তান বন্দিদেরও মুক্তি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। বুধবারই সৌজন্যের নজির হিসেবে ওই বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই পরিবেশে তা কোনো মতেই সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতের তরফে। সবমিলিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক ফের তলানিতে ঠেকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/১১ এপ্রিল, ২০১৭/ফারজানা