তিন বছর আগেও যিনি ছিলেন অচেনা একজন, সেই ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকেই প্রেসিডেন্ট বানাল ফরাসিরা। ৩৯ বছর বয়সী ম্যাক্রোঁই ফ্রান্সের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট। এ নির্বাচনকে 'রাজনৈতিক ভূমিকম্প' আখ্যা দিয়ে ম্যাক্রোঁর জয়ের পাঁচটি কারণ জানাচ্ছে বিবিসি বাংলা।
'যে পাঁচটি কারণে ফ্রান্সের নির্বাচনে বিজয়ী হলেন ম্যাক্রন' শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, প্রথমত ম্যাক্রোঁ ছিলেন খুবই সৌভাগ্যবান। কারণ তিনি সম্পূর্ণ একটি অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছেন। তবে শুধু ভাগ্যের উপর নির্ভর করে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেননি। তিনি বেশ কৌশলীও ছিলেন। ম্যাক্রোঁ সোশালিস্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিতে পারতেন। তিনি সেটি করেননি। তিনি বুঝতে পারছিলেন সোশালিস্ট পার্টি জনপ্রিয়তা হারিয়েছে এবং সে দল থেকে নির্বাচন করলে জয়লাভ করা যাবে না ।
ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে কী ঘটছে ম্যাক্রোঁ সেদিকে লক্ষ্য রেখেছেন। বিশেষ করে স্পেন এবং ইতালিতে। ম্যাক্রোঁ লক্ষ্য করেন, স্পেন এবং ইতালির মতো কোন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি ফ্রান্সে গড়ে উঠেনি। সেজন্য ২০১৬ সালে ম্যাক্রোঁ গড়ে তোলেন ভিন্ন একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম এবং একই সাথে তিনি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওলাদের সরকার থেকে পদত্যাগ করেন।
ম্যাক্রোঁ নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই ভোটারদের ঘরে-ঘরে গিয়েছেন। তিনি ভোটারদের মাঝে ইতিবাচক বার্তা দিতে পেরেছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট ওলাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। এক সময় তিনি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকারও ছিলেন। তিনি মন্ত্রী থাকার সময় ফ্রান্সে সরকারি ব্যয় কমানোর বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ফ্রান্সের জনগণ যে নতুন কিছু পেতে চায় সেদিকে মনোযোগ দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। এদিকে, ম্যাক্রোঁর প্রতিযোগী লো পেন সব কিছুতেই নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। তিনি ইমিগ্রেশন বিরোধী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধী ছিলেন।
ম্যাক্রোঁর নির্বাচনী জনসভাগুলো ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। সেখানে পপ মিউজিক হতো এবং আরও নানা ধরনের অনুষ্ঠান থাকতো। অন্যদিকে লো পেন'র নির্বাচনী জনসভাগুলোতে বিভিন্ন সময় বিশৃঙ্খলা দেখা যেতো। জনসভায় অংশ নেয়া দর্শকরা নিজেদের মধ্যে পানির বোতল ছোড়াছুড়ি করতেন। সেসব জনসভায় নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি থাকতো।
এছাড়া, একজন উগ্র ডানপন্থীর উত্থানের আশংকায় অনেকেই উদ্বিগ্ন ছিলেন। লো পেনকে আটকানোর জন্য ম্যাক্রোঁকেই সর্বশেষ ভরসা ভেবেছিল ভোটাররা । লো পেন বেশ জমজমাট নির্বাচনী প্রচারণা চালালেও বিভিন্ন জরিপে তার জনপ্রিয়তা ক্রমাগত কমতে থাকে। নির্বাচনের আগে দুই সপ্তাহে লো পেন জনমত জরিপে দুইবার পরাজিত হয়েছেন ম্যাক্রোঁর কাছে।
বিডি প্রতিদিন/৮ মে, ২০১৭/ফারজানা