উজবেকিস্তান জাতীয় ফুটবল দল তাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার টিকিট নিশ্চিত করেছে। এই অর্জনের পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উচ্ছ্বাস। বিশেষ করে রাজধানী তাশখন্দের মিল্লি স্টেডিয়ামে কাতারকে ৩-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করার পরপরই এক ব্যতিক্রমী উদযাপন দেখা যায়।
ম্যাচ শেষে স্টেডিয়ামের মাঠেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয় বিলাসবহুল ‘BYD’ ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়ি। খেলোয়াড়দের হাতে তুলে দেওয়া হয় এসব গাড়ির চাবি। এই উদযাপনের নেতৃত্ব দেন উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভ। বিশ্বকাপ নিশ্চিতের পরপরই তিনি ঘোষণা দেন- জাতীয় দলের প্রতিটি খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফদের এই স্মরণীয় অর্জনের জন্য বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী খেলোয়াড়দের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৩০ থেকে ৪০টি ‘BYD’ বৈদ্যুতিক গাড়ি। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ও গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার হয় এই মুহূর্তটি।
মাঠের মধ্যেই গাড়িগুলোর সারি তৈরি করা হয়, তারপর একে একে প্রতিটি খেলোয়াড়কে গাড়ির চাবি দিয়ে সম্মান জানানো হয়। এই আয়োজনটি ছিল শুধুমাত্র উপহারের মুহূর্ত নয়, বরং এটি ছিল একটি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং গর্ব প্রকাশের প্রতীক। অনেকেই এই দৃশ্যকে উজবেকিস্তানের ফুটবলের ‘স্বপ্নপূরণের ক্ষণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
কাতারের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক ছিলেন তিনজন ফরোয়ার্ড। খুসনিদিন নোরচায়েভের জায়গায় একাদশে নামা তুর্গুনবোয়েভ প্রথম গোল করেন ২৮ মিনিটে। ম্যাচের শেষদিকে অধিনায়ক এলদোর শোমুরোদোভ এবং ইগর সেরগেয়েভ করেন আরও দুটি গোল। এই জয় উজবেকিস্তানকে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দ্বিতীয় রাউন্ডের ‘গ্রুপ-ই’ থেকে শীর্ষে উঠিয়ে দেয় এবং ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের মূল পর্বের দিকে একধাপ এগিয়ে দেয়।
খেলোয়াড়দের গাড়ি উপহার দেওয়ার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট আরও একটি ডিক্রি জারি করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে জাতীয় দলের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় পদক, সনদ ও সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত করা হবে। কোচ তিমুর কাপাদজে বলেছেন, “এই অর্জন শুধুমাত্র আমাদের নয়, পুরো জাতির। এই জয় আমরা আমাদের দেশের জনগণ ও প্রেসিডেন্টকে উৎসর্গ করছি।”
উল্লেখ্য, ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপ যৌথভাবে আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকো। এবারই প্রথম ৪৮টি দেশ খেলবে বিশ্বকাপে, ফলে উজবেকিস্তানের মতো দলগুলোর সামনে সুযোগ এসেছে ইতিহাস গড়ার। আর উজবেকিস্তান তাদের সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করল।
এই অর্জনের সম্মানস্বরূপ বিলাসবহুল গাড়ি উপহার দেওয়ার ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অঙ্গনেও ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেকেই বলছেন, খেলোয়াড়দের এমন সম্মান জানানো মানে শুধু পুরস্কার দেওয়া নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের জন্য উদ্দীপনার বার্তা। উজবেকিস্তানের ফুটবল এখন শুধুমাত্র মধ্য এশিয়ায় নয়, বিশ্ব ফুটবলেও নিজেদের পরিচয় জানাতে প্রস্তুত।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ