ঈদের টানা ছুটিতে কক্সবাজার, সিলেট, রাঙামাটি, পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কক্সবাজার : কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। চমৎকার পরিবেশ ও আবহাওয়াকে সঙ্গে করে কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন দেশিবিদেশি পর্যটকরা। পর্যটকের আনাগোনায় মুখর লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলি পয়েন্ট। ঈদের লম্বা ছুটির চতুর্থ দিন বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে কেটেছে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত। ঈদের পরের দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত চার দিনে প্রায় ৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণের তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা আরও বলছেন, আগামী শনিবার পর্যন্ত ছুটি থাকায় আরও পর্যটক আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে কক্সবাজারে ১২ লাখ পর্যটক এসেছিলেন। হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকান, শুঁটকি ও সামুদ্রিক মাছসহ ১৩টি খাতে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে ৮ লাখ পর্যটকের বিপরীতে ৭০০ কোটি টাকার মতো ব্যবসা হতে পারে। ইতোমধ্যে ৫ লাখের মতো পর্যটক কক্সবাজার ঘুরে গেছেন।
সমুদ্রসৈকত ছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর পর্যটন কেন্দ্র, হিমছড়ি ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানি-পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, ঐতিহাসিক প্রেমের নিদর্শন মাথিন কূপ, নেচার পার্ক, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধ পল্লিসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন জমজমাট।
সিলেট : পবিত্র ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটিতে পর্যটকদের স্বাগত ও বিদায় জানাতে ব্যস্ত সময় পার করছে সিলেট। হোটেল-মোটেল ও রেন্ট-এ-কারের ব্যবসায়ীদের যেন ব্যস্ততার শেষ নেই। ব্যস্ততা বেড়েছে পর্যটন কেন্দ্রের রেস্টুরেন্টগুলোতেও। পর্যটন কেন্দ্রের আশপাশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। ঈদের পরদিন থেকে সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কেউ কেউ ভ্রমণ শেষে নিজস্ব গন্তব্যে ফিরছেন। আবার কেউ কেউ আসছেন বেড়াতে। শনিবার পর্যন্ত সরকারি ছুটি হলেও আগামী এক সপ্তাহ সিলেটে পর্যটক সমাগম থাকবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা। তিন দিনের জন্য সিলেটে বেড়াতে আসা বেশির ভাগ পর্যটক তাদের ভ্রমণসূচিতে দুই দিন পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণ, এক দিন মাজার জিয়ারতের জন্য রাখছেন। পর্যটকরা যেদিন জাফলং বেড়াতে যান সেদিন একই সঙ্গে ঘুরে আসেন মায়াবী ঝরনা, লালাখাল ও জৈন্তা রাজবাড়ি। আর পর্যটকরা যেদিন সাদাপাথর দেখতে যান সেদিন ফেরার পথে দেখে আসেন উৎমাছড়া, রাতারগুল ও চা বাগান। আর ফেরার দিন তারা হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.)-সহ ওলি-আউলিয়াদের মাজার জিয়ারতের জন্য হাতে সময় রাখেন। তবে কেউ কেউ সিলেট এসেই প্রথমে সেরে নেন মাজার জিয়ারত।
পরে বের হন পর্যটন কেন্দ্রগুলোর উদ্দেশ্যে। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কেউ কেউ এক দিন হাতে সময় নিয়ে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়াও ঘুরে আসছেন। সিলেট ভ্রমণ শেষে কেউ সোজা চলে যাচ্ছেন নিজেদের গন্তব্যে, আবার কেউ এক দিনের যাত্রাবিরতি দেন আরেক পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গলে।
রাঙামাটি : শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। হাজারো পর্যটকের পদচারণে মুখরিত পাহাড়ের পথ-প্রান্তর। ঈদের ছুটিকে কাজে লাগাতে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটছে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ পাহাড়ে। প্রায় প্রতিদিন আসছে দুই থেকে চার হাজারেরও বেশি পর্যটক। শুধু রাঙামাটি নয়, এমন পর্যটক উৎসবে মেতেছে অপর দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানও। সবুজ অরণ্যে রাজ্য পার্বত্যাঞ্চলে পুরোদমে শুরু হয়েছে পর্যটক আমেজ। অগণিত পর্যটক আগমনে তিল পরিমাণ জায়গা খালি নেই কোথাও। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত কোথাও রুম খালি নেই। আছে অগ্রিম বুকিংও।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : ঈদের পঞ্চম দিন পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকত পর্যটকে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে। শুধু সৈকতের জিরো পয়েন্টই নয়, গঙ্গামতী, ঝাউবাগান, শুঁটকি পল্লি ও লেম্বুর বনসহ সব পর্যটন স্পটেই এখন পর্যটকে ভিড়। এ ছাড়া পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন ঐতিহ্যবাহী সীমা বৌদ্ধ বিহার, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার ও রাখাইন পাড়াগুলোতে। স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকাল থেকে আগত পর্যটকরা পুরো সৈকত এলাকায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন।