স্বপ্ন নিয়ে মাঠে ঢুকেছিলেন হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী। প্রচণ্ড তাপমাত্রা, ভ্যাপসা গরম ও মুষলধারার বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রিয় বাংলাদেশকে সমর্থন জুগিয়েছেন। কিন্তু দিনশেষে বাড়ি ফিরেছেন বেদনাহত হয়ে, হতাশ হয়ে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জয়ের জন্য খেলতে নেমে ১-২ গোলে হেরেছেন হামজা চৌধুরী, সামিত সোম, তারিক কাজি, ফাহামিদুল ইসলাম, কাজেম শাহ, তপু বর্মন, মিতুল মারমারা। এ হারের চুলচেরা বিশ্লেষণে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার ভুল ট্যাকটিসকেই দোষারোপ করছেন বিপিএল চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের কোচ আলফাজ। শুধু তাই নয়, ভুটান ম্যাচে দারুণ খেলা জামাল ভূঁইয়াকে না খেলানোকেও কাবরেরার ভুল বলে ধরা হচ্ছে। যদিও ম্যাচের ৯৩ মিনিটে রেফারির ভুলে পরিষ্কার একটি পেনাল্টি বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে পরিষ্কার ফাউল করেছিলেন সিঙ্গাপুরের রক্ষণভাগের ফুটবলার। সিঙ্গাপুরের কাছে হারের পর ‘সি’ গ্রুপ থেকে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন ধূসর হয়ে গেছে বাংলাদেশের। অবশ্য বাংলাদেশ দলের প্রাণভোমরা হামজা এখনো স্বপ্ন দেখছেন, ‘আমরা যেমনটা চেয়েছিলাম, তেমনটা হয়নি। কিন্তু একটা দল হিসেবে এবং জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত হতে পারি। আমাদের ইতিবাচক থাকতে হবে। কারণ, আমরা সবে শুরু করছি। ইনশআল্লাহ, আমরা যেখানে যেতে চাই খুব শিগগিরই সেখানে পৌঁছাব।’ বাংলাদেশ ১৯৮০ সালে একবারই এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলেছিল।
সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে যে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছিল গোটা দেশে, হারের পর সেটা এক ধাক্কায় অনেকটাই নিভে গেছে। হারলেও আশা টিকে আছে। এজন্য পরের ৪ ম্যাচে জিততেই হবে। তখন হয়তো পয়েন্টের সমীকরণে আশা থাকবে চূড়ান্ত পর্ব খেলার। পরশু ম্যাচ খেলার পর গতকাল সকালে টার্কিশ এয়ারওয়েজে ঢাকা ছাড়েন হামজা ও সামিত। কোচ কাবরেরাও স্পেনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। হামজা ইস্তাম্বুল থেকে লন্ডন যাবেন এবং সামিত যাবেন কানাডা। সিঙ্গাপুর ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে কানাডা জাতীয় দলের পক্ষে দুটি ম্যাচ খেলা সামিতের। অভিষেক ম্যাচে আলো ছড়িয়েছেন। একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করেন। হেরে হতাশ হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে আশার কথা লেখেন সামিত, ‘ধন্যবাদ বাংলাদেশ, প্রথমবারের মতো এই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার এবং খেলার এক অসাধারণ অনুভূতি হয়েছে। ম্যাচে আমরা যা চেয়েছি, সেটা হয়তো হয়নি। তাই একটু হতাশ। তবে এ দলের অংশ হতে পেরে আমি দারুণ গর্বিত। ভক্তদের ধন্যবাদ আমাকে এভাবে গ্রহণ করার জন্য। সবে তো শুরু হলো।’
র্যাঙ্কিংয়ে ২২ ধাপ এগিয়ে সিঙ্গাপুর। দলটির বিপক্ষে এর আগে যে দুবার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ, জয় ছিল না। ১৯৭৫ সালে ১-১ গোলে ড্র এবং ২০১৫ সালে হেরেছিল ১-২ গোলে। তৃতীয় মুখোমুখিতেও হেরেছে ১-২ গোলে। গত পরশু ঘরের মাটিতে হারের ব্যাখ্যায় জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার, জাতীয় দলের কোচ ও ফুটবল বিশ্লেষক গোলাম সরোয়ার টিপু বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের কাছে হারে ব্যক্তিগতভাবে আমি হতাশ নই। তবে ম্যাচে আমাদের টেকনিক্যালি কিছু ভুল ছিল। সিঙ্গাপুরের ফুটবলারদের তুলনায় আমাদের ফুটবলারদের মেধা কম, বুদ্ধি কম। যার জন্য সুযোগ পেয়েও গোল পাইনি।’ মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ বলেন, ‘সলিড একাদশ খেলানো হয়নি। কোচের ট্যাকটিসে অনেক ভুল ছিল। তার ট্যাকটিক্যাল ভুলেই আমরা হেরেছি। রক্ষণভাগ এলোমেলো ছিল। দুটো গোলই খেয়েছি রক্ষণভাগ ও গোলরক্ষকের ভুলে।’ ভুটান ম্যাচে দারুণ খেলার পরও কোচ কাবরেরা খেলাননি জামালকে। অথচ ম্যাচে বাংলাদেশ ১০টি কর্নার পেয়েছে। জামাল কর্নার ও সেট পিসে দুর্দান্ত। কোচের বিষয়ে আলফাজ বলেন, ‘কোচের অবশ্যই ট্যাকটিকালি কিছু ভুল ছিল। তাকে বদলানো উচিত হবে কি না, এটা বাফুফে বলতে পারবে।’
চার দলের ‘সি’ গ্রুপে ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গোল পার্থক্যে সবার ওপরে সিঙ্গাপুর। ৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে হংকং। বাংলাদেশ ও ভারতের পয়েন্ট ১। ভারত ০-১ গোলে হেরেছে হংকংয়ের কাছে। ৯ অক্টোবর ঢাকায় প্রতিপক্ষ হংকং। ১৪ অক্টোবর হংকংয়ের বিপক্ষে হংকংয়ের মাটিতে খেলা। ১৮ নভেম্বর ঢাকায় প্রতিপক্ষ ভারত এবং ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাটিতে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলবেন হামজারা।