ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ‘জুলাই সনদ’ ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’কে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু জুলাই সনদকে সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে বিএনপি। একইভাবে জুলাই ঘোষণাপত্রকেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে দলটি। গত সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে জুলাই সনদের খসড়া পেয়েছি। আমরা তা পর্যবেক্ষণ করছি। এ বিষয়ে আগামী ৩১ জুলাইয়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত বলা যাবে।’
সূত্র মতে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্যে কমিশনের সংলাপের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। জুলাই সনদের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে জুলাই সনদে বিগত ১৫ বছরের বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর অবদান তুলে না ধরায় আপত্তির কথা জানান কোনো কোনো সদস্য। বৈঠকে তারা বলেন, জুলাই সনদে শুধু চব্বিশের গণ অভ্যুত্থান তুলে ধরা হয়েছে। পতিত ফ্যাসিবাদের মূল হোতা শেখ হাসিনার নাম কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। অথচ তার নেতৃত্বে জুলাইয়ের গণহত্যাসহ পুরো আমলে নৃশংসতা চালানো হয়েছিল। বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গুম-খুন, নির্যাতন-নিপীড়ন কথা তুলে ধরা হয়নি। অথচ বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় দেশে জুলাই গণ অভ্যুত্থান হয়েছে। জুলাই আন্দোলনে বিএনপির ৪ শ বেশি নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতিও সেভাবে তুলে ধরা হয়নি। একতরফাভাবে শুধু জুলাই গণ অভ্যুত্থানকেই তুলে ধরা হয়েছে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে জুলাই সনদের একটি খসড়া বিএনপিসহ ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পাঠিয়েছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মিলে ৫ আগস্টের আগেই এটি চূড়ান্ত করতে চায় সরকার। সরকার জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি চায়। সরকার এই সনদে আরও কিছু বিষয় রাখতে চায়, সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত প্রয়োজন।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আরও উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।