রুমা আক্তার। বয়স ৩৫। স্বামী প্রবাসী মো. মোবারক হোসেন। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাতে সাভারের দক্ষিণ রাজাশনের বাসায় খুন হন সেই রুমা। মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) উন্মোচন করে হত্যা রহস্য। জানায়, পরকীয়ার বলি হয়েছেন রুমা। বিয়ের পর স্বামী মোবারক হোসেনের সঙ্গে ভালোই কাটছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। একসময় ওই দম্পতির ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় এক মেয়ে। নাম রাখেন মারিয়া আক্তার সামিয়া। তারপর জীবিকার তাগিয়ে মোবারক পাড়ি জমান সিঙ্গাপুরে। বিদেশ থেকে স্বামী নিয়মিত স্ত্রীর কাছে টাকা পাঠান। ১৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। তবে বিয়ের প্রায় ২২ বছর পর ঘটনাচক্রে বিপথগামী হয়ে পড়েন রুমা। মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ধলাগাঁও বাজারের মো. রুবেলের সঙ্গে লিপ্ত হন পরকীয়ায়। এ সময় রুবেল কৌশলে রুমার কাছ থেকে ধার নেওয়া শুরু করে তার স্বামীর কষ্টার্জিত টাকা। কিন্তু স্বামী দেশে ফেরার খবর শুনে রুবেলের কাছে টাকা ফেরত চায় রুমা। আর এই টাকা ফেরত চাওয়াকে কেন্দ্র করেই রাতের আঁধারে নিজ বাসায় রুমাকে গলা কেটে হত্যা করে পরকীয়া প্রেমিক রুবেল। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রুমার খুনের ঘটনায় ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নিহতের ভাই মো. আরিফ হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে সাভার থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলাটি প্রথমে সাভার থানার একজন এসআই, পরে পিবিআইর ঢাকা জেলার দুই এসআই এবং সর্বশেষ পিবিআইয়ের আরেকজন পরিদর্শক তদন্ত করেন। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সাভারের রাজধানী বেকারির ম্যানেজার কামরুল হাসানকে শনাক্ত করা হয়। তার সঙ্গে ইমো ও মোবাইল ফোনে কথা বলতেন রুমা। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আনা হয় রিমান্ডে। কিন্তু ঘটনার নেপথ্য কারণ আর উদঘাটিত হচ্ছিল না। একপর্যায়ে তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণে, সুরতহাল রিপোর্ট, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, ফরেনসিক রিপোর্ট, জব্দ তালিকা এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা পর্যালোচনা করে পিবিআই রুমার একমাত্র খুনি হিসেবে চিহ্নিত করে পরকীয়া প্রেমিক রুবেলকে। এ সময় পিবিআই জানতে পারে ঘটনার পরপরই রুবেল ভারতের গুজরাটে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের কথা নিহত রুমার স্বামী মোবারকের কাছে স্বীকার করে রুবেল। বিষয়টি রুবেলের দুলাভাই সাইফুলের মাধ্যমে মীমাংসার জন্য চাপ দিতে থাকে সে। এ পর্যায়ে ঢাকার শাহআলী এলাকায় ফল বিক্রেতা রুবেলকে রুমা হত্যা মামলার একমাত্র আসামি করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. খালেদ জানান, ঘটনার দিন খুনি রুমার একমাত্র মেয়ে সামিয়াকে তার বড় খালা রুনা আক্তারের বাসায় রেখে আসতে বলে। রুবেল রুমাকে জানায়, তোমার সব টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তাই রুবেলের পরিকল্পনা অনুযায়ী সে তাই করেছিল। কিন্তু কেন মেয়েকে খালার বাসায় রেখে আসতে বলে, সেটি জানত না রুমা। সে বাসায় একাই ছিল। রাতে যখন রুমার বাসায় আসে রুবেল তখন ভাড়াটিয়া জাকির দেখতে পান। তবে রুমাকে হত্যা করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় রুবেল। ঢাকা জেলার পিবিআই দীর্ঘ তদন্তে রুবেলকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং কামরুল হাসানকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে চলতি বছরের জুনে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।