নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীতে এক বিয়ে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মুহুর্তেই বিয়ের আনন্দ রূপ নিয়েছে বিষাদে। স্বজনদের এখন অপেক্ষা লাশের। মাছ ধরা নৌকার সাথে সংঘর্ষ হওয়ায় স্পিডবোট চালককে মারধর করার সময় স্পিডবোট ডুবে চারজন নিখোঁজদের মধ্যে ২২ ঘন্টা পর একজনের মরদেহ ভেসে ওঠে।
ঘটনাটি শুক্রবার বিকালে নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার গাজিপুর ইউনিয়নের পাচহাট আন্ধার গ্রামের। নিখোঁজের মধ্যে নোপায়েল মিয়ার সাত বছর বয়সী মেয়ে উষামনির লাশ একদিন পর উদ্ধার হয়েছে। বাকী নিখোঁজ থাকা অন্যরা হলো বয়রা আন্ধার গ্রামের নবাব মিয়ার মেয়ে ও বর রানার বোন শিরিন আক্তার (১৮), আন্ধাইর গ্রামের স্বপন মিয়ার মেয়ে লায়লা (৭), সামসু মিয়ার মেয়ে সামিয়া (১১)।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও লেপসিয়া তদন্ত ফাঁড়ির নৌ পুলিশ ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, পাচহাট আন্ধার গ্রামের নবাব মিয়ার ছেলে রানা মিয়ার বিয়ে ঠিক হয় পাশ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার মিরকা গ্রামে। শুক্রবার বিকালে বরযাত্রা যাওয়ার কথা থাকলে গ্রামীণ পার্বন পানি কাটতে যায় নারীরা। বাড়ির সামনে থেকে একটি স্পিডবোটে নারী শিশু সহ ১২ জন ওঠে। পরে স্পিডবোটটি পাচহাট চরপাড়া গ্রামের মাঝামাঝি ধনু নদীতে ভিম জাল দিয়ে মাছ ধরার খোসা নৌকায় ওঠে পড়ে। এতে নৌকায় থাকা বাবা ছেলে ক্ষিপ্ত হয়ে স্পিডবোট চালককে মারধর করতে বোটে লাফিয়ে ওঠে এবং বোটটি তখন তলিয়ে যায়। বোটে থাকা নারীরা তাদের শিশুদের বাঁচাতে অনুনয় বিনয় করলেও তারা না বাঁচিয়ে বোটে চাপেন। এসময় বোট ডুবে গেলে সাঁতরে ৮ জন অপর একটি নৌকায় বেচে ওঠলেও বরের বোন শিরিন আক্তারসহ আরও তিন শিশু নিখোঁজ হয়।
এদিকে উষা নামের শিশুর মা ফাতেমা আক্তার বেচে গেলেও কন্যা সন্তান উষার লাশ একদিন পর ভাসে। স্বজনরা লাশের অপেক্ষায় নদী এবং হাওরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সাথে খুঁজছেন। অন্যদিকে নারীরা সন্তানের মরদেহ পাবার অপেক্ষায়। তবে স্পিডবোট থেকে বেঁচে ফেরা রোজিনা (৩২) নামের নারীকে ইটনা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান জানান তারা বিষয়টি দেখছেন।
নিখোঁজ লায়লার বাবা স্বপন মিয়া বলেন, স্পিডবোটের চালকের দোষ থাকলে তাকে পরেও বিচার করা যেতো। কিন্তু জহিরুল ও সত্তর মিয়া শিশু নারীসহ বোটটি ডুবিয়ে দেয়। এটি একটি খুন। আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই। বর্তমান গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রওফ স্বাধীন জানান, স্পিড বোটটি নৌকার ওপর ওঠে গেলে জহিরুলের বাবা সহ তলিয়ে যায়। তাই রাগে জহিরুল বোটের চালকের উপরে ক্ষিপ্ত হয়। বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক একটা ঘটনা।
নৌ পুলিশের পরিদর্শক বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, আমরা খবর পেয়েই এখানে রয়েছি। যে বিষয়টি শুনছি তা ক্ষতিয়ে দেখছি।
নেত্রকোনা ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, শুক্রবার নিখোঁজের পর থেকে রাতেই ডুবুরি চলে আসে। রাতে অভিযান হয় না। তাই শনিবার সকালে ডুবুরি দল উদ্ধার তৎপরতা চালায়। চারজনের মধ্যে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার হয়।
বিডি প্রতিদিন/এএম