কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে আরাকান আর্মির হাতে একের পর এক অপহরণের ঘটনায় আতঙ্কে সীমান্তের জেলেরা। সর্বশেষ বুধবার বিকালে সেন্ট মার্টিনের পূর্ব-দক্ষিণ সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আরাকান আর্মির হাতে পাঁচটি ট্রলারসহ ৪০ জেলে অপহৃত হন। জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির হাতে অপহৃত হয়েছেন ৩২৫ জন বাংলাদেশি জেলে। এর মধ্যে প্রশাসন ১৮৯ জেলে এবং ২৭টি নৌযান ফেরত আনতে পেরেছে। বাকিদের ফেরত আনার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। এতে আতঙ্কের পাশাপাশি অপহৃত জেলে পরিবারে চলছে শোক, দেখা দিয়েছে অভাব-অনটন।
এর মধ্যে বুধবার অপহৃত ৪০ জেলের মধ্যে ১৭ জন কৌশলে আরাকান আর্মির ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসেছেন বলে জানা গেছে। গতকাল বিকালে তাঁরা একটি ট্রলারে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে পৌঁছালে কোস্টগার্ড তাঁদের হেফাজতে নেয়। পরে রাতেই পরিবারে হস্তান্তর করা হয়।
ফিরে আসা জেলে শামসুল আলম জানান, শাহপরীর দ্বীপ এলাকার মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন একটি ট্রলারে তাঁরা নয়জন সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন। হঠাৎ আরাকান আর্মির একটি স্পিডবোট ধাওয়া করে তাঁদেরটিসহ পাঁচটি ট্রলার আটক করে। এরপর তাঁদের দুই সদস্য ট্রলারে উঠে ট্রলারগুলো মিয়ানমারের দিকে চালাতে নির্দেশ দেয়। তিনি আরও বলেন, ‘অন্ধকারে স্পিডবোটটি সামনে এগিয়ে গেলে আমরা সুযোগ নিয়ে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে সেন্ট মার্টিনের কাছাকাছি চলে আসি। তখন আমাদের ট্রলারে থাকা আরাকান আর্মির দুই সদস্য সাগরে ঝাঁপ দিয়ে মিয়ানমারের দিকে সাঁতরে চলে যায়।’
ট্রলার মালিক মোহাম্মদ হাসান একই কথা বলেন, ‘আরাকান আর্মি ধাওয়া দিয়ে আমারটিসহ পাঁচটি ট্রলার আটক করে মিয়ানমারের দিকে নিয়ে যায়। পরে আমার ট্রলারটি পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়।’
টেকনাফ থানার ওসি আবু জায়েদ নাজমুন নুর জানান, কোস্টগার্ড উদ্ধার করা জেলেদের পুলিশে হস্তান্তর করেছে। যাচাইবাছাই শেষে মিয়ানমারের জলসীমার কাছাকাছি মাছ শিকারে না যাওয়ার মুচলেকা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁদের পরিবারে হস্তান্তর করা হয়।
বোট মালিক ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৫ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ ট্রলারসহ ৮১ জনকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। যাদের একজনকেও ফেরত পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে ৩২৫ জেলেকে। সীমান্তবর্তী এলাকা টেকনাফের নাফ নদের বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন বলেন, তাঁদের জীবন-জীবিকার বড় মাধ্যম নাফ নদে মাছ ধরা। কিন্তু আরাকান আর্মির ভয়ে তাঁরা মাছ শিকারে যেতে পারছেন না। ৫ সেপ্টেম্বর দুই ভাই ওসমান গনি ও আবদুল করিমকে ধরে নিয়ে গেছে, এখনো তাঁদের খবর পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের দ্রুত ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে। রামু বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদও জেলেদের সতর্ক করে বলছেন, অনেক সময় জেলেরা মাছ শিকার করতে করতে মিয়ানমারের জলসীমায় চলে যান। আর তখনই ঘটে বিপদ। নয়তো মিয়ানমারের কারও কোনো ক্ষমতা নেই এপারে এসে জেলে ধরে নিয়ে যাওয়ার। প্রক্রিয়া চলছে জেলেদের ফেরত আনার। তবে জেলেদের অনেকে বলছেন ভিন্ন কথা। আরাকান আর্মি এপারে এসেই জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।