নেপালে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। গতকাল নেপালি সময় সন্ধ্যায় এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। এর আগে সকালে নতুন সরকার গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি ও সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা বৈঠক বসে। বৈঠকে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী করার ব্যাপারে সবাই একমত হন। তবে জেন-জের দাবি ছিল সংসদ ভেঙে দেওয়ার। বিকালে দ্বিতীয় দফার বৈঠকে রাষ্ট্রপতি জেন-জিদের দাবি মেনে সংসদ ভেঙে দিতে সম্মত হওয়ার পর সর্বসম্মতভাবে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর মধ্যদিয়ে ৭৩ বছর বয়সি সুশীলা কার্কি নেপালের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সূত্র : দ্য হিমালয়া টাইমস, দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট, দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট, আল জাজিরা, বিবিসি।
প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৯টা থেকে রাষ্ট্রপতির বাসভবন শীতল নিবাসে রাষ্ট্রপতি ও সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাম চন্দ্র পাউদেলের সভাপতিত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে সবপক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেলসহ জেন-জের প্রতিনিধিরা। বৈঠক দুপুর পর্যন্ত চলার পর কয়েক ঘণ্টার জন্য স্থগিত করা হয়। প্রথম দফার বৈঠকে সাবেক বিচারপতি সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে সরকার গঠনের খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করা হয়। জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলো দাবি করে সংসদ ভেঙে না দিয়েই একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে হবে। অন্যদিকে জেন-জে গ্রুপ সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে। এই সঙ্গে সংবিধানের বিধান নিয়েও কথা ওঠে। কারণ সংবিধান অনুযায়ী সংসদের সদস্য না থাকা যে কোনো ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে সকালের বৈঠকে নতুন সরকারপ্রধান হিসেবে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী করার ব্যাপারে ঐকমত্য হলেও তাঁকে কীভাবে সংসদীয় অনুমোদন প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা যায়, তার সমাধান প্রথম দফার বৈঠকে বের করা যায়নি। তবে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে এ ব্যাপারে সমাধান তৈরি হয়।
সেনা নিয়ন্ত্রণে পরিস্থিতি : জেন-জে অভ্যুত্থানের পর নেপালের সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থান গ্রহণ করায় দেশটির পরিস্থিতি এখন শান্ত হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় সেনা ও ট্যাঙ্ক বহর টহল দিচ্ছে। আগেই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, কোনো রকম বিক্ষোভ, সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ দেখা মাত্র কঠোর হস্তে নির্মূল করা হবে। এই অবস্থানের পর পরিস্থিতি শান্ত হতে থাকে। অভ্যুত্থানকারীদের মধ্যে যারা সশস্ত্র ছিলেন, তারা তাদের অস্ত্র জমা দিচ্ছেন। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা দুই দিনে তিন শতাধিক অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এ লক্ষ্যে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
এ ছাড়া গতকাল রাজধানী কাঠমান্ডুর দোকানপাট খুলতে শুরু করে। সড়কে যানবাহনও চলতে দেখা গেছে। কিছু সড়কে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, তার পরিমাণ কমতে শুরু করে।
সহিংসতায় মৃত্যু ৫১ : জেন-জে বিক্ষোভে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫১ জনে পৌঁছেছে। এ সময় ১ হাজার ৩০০ জন মানুষ আহত হয়েছেন। লুটপাট, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কয়েক শ কোটি রুপি।
এ ব্যাপারে পুলিশ বাহিনীর মুখপাত্র ডিআইজি বিনোদ ঘিমিরে বলেছেন, নিহতদের মধ্যে কাঠমান্ডু উপত্যকাসহ অন্যান্য জেলার মানুষও রয়েছেন। সহিংসতায় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ভারতীয় নারী ও পুলিশের তিন সদস্যও রয়েছেন।
ভারতকে দুষছেন অলি : সেনা নিরাপত্তায় থাকা নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি তার পতনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দুষছেন। নেপাল সেনার শিবপুরি ব্যারাক থেকে এক বিবৃতিতে অলি উল্লেখ করেছেন, তার অপসারণের জন্য ভারত দায়ী। লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরা সীমান্ত বিরোধ ইস্যু না তুললে এখনো তিনি ক্ষমতায় থাকতেন। এসব অঞ্চল নিয়ে নেপাল ও ভারতের বিরোধ রয়েছে। অলি দাবি করেন, তিনি ক্ষমতা হারিয়েছেন, কারণ তিনি ‘অযোধ্যায় ভগবান রামের জন্মে’র বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি জোর দিয়ে বলেছি যে লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরা নেপালের অংশ। আমি এও বলেছি, ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী ভগবান শ্রী রামের জন্ম নেপালে, ভারতে নয়। আমি যদি এসব বিষয়ে আপস করতাম, তবে অনেক সহজ পথ বেছে নিতে পারতাম এবং বহু সুবিধা ভোগ করতে পারতাম।’