দলাই লামার অরুণাচল সফরের পরিকল্পনা শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল চীন। তিব্বতি ধর্মগুরুকে ভারত যদি অরুণাচল প্রদেশে যেতে দেয়, তা হলে ফল খারাপ হবে, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বেইজিং। নয়াদিল্লি অবশ্য গুরুত্ব দেয়নি। নির্ধারিত সূচি মেনেই উত্তর-পূর্বের বিস্তীর্ণ এলাকা সফর করেন নির্বাসিত তিব্বতি সরকারের কাণ্ডারী। কিন্তু সেই সফরের পর প্রায় এক মাস কাটলেও তিক্ততা যে একটুও কমেনি, তা বুঝিয়ে দিল চীন।
ভারত ও চীনের মধ্যে যে দ্বিপাক্ষিক সামরিক মহড়া হওয়ার কথা ছিল, তা সম্ভবত বাতিল হচ্ছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এই খবর মিলেছে। মহড়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যে ‘ইনিশিয়াল প্ল্যানিং কনফারেন্স’ (আইপিসি) হওয়ার কথা ছিল, চীনের কারণেই সে সম্মেলন হচ্ছে না, জানা গেছে সাউথ ব্লক সূত্রে।
ভারতের সঙ্গে চীনের সাম্প্রতিক টানাপড়েন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তার জেরেই চীনের এই সিদ্ধান্ত বলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা মনে করছেন। যে কোন আন্তর্জাতিক বিবাদেই চীন যে ভাবে আগ্রাসী নীতি নিয়ে বিপরীত পক্ষকে চাপে ফেলতে চায়, এ বারও সেই নীতিই নেওয়া হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বিপরীত দিকে থাকা দেশটির নাম যেহেতু ভারত, সেহেতু প্রকাশ্য আগ্রাসন চীন দেখাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, চীন ‘নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন’ দেখাচ্ছে। দলাই লামার অরুণাচল সফর নিয়ে প্রকাশ্যে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েও যে কোনও কাজ হয়নি, তা বেইজিং ভোলেনি।
ভারতের সঙ্গে চীনের বিবাদ অবশ্য শুধুমাত্র দলাই লামাকে কেন্দ্র করে নয়। বিবাদের কারণ আর অনেক। দীর্ঘদিন ধরেই এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তির তীব্র বিরোধিতা করছে চীন। মাসুদ আজহারের মতো জঙ্গির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাবও চীনা ভেটোয় বার বার আটকে যাচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে চীন অর্থনৈতিক করিডর বানিয়েছে, ভারত যার তীব্র বিরোধিতা করেছে।
সব মিলিয়ে ভারত-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রবল টানাপড়েনের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে। রাশিয়া, ভারত এবং চীনের মধ্যে যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, সম্প্রতি সে বৈঠকে যোগ দেয়নি চীন। আবার আগামী রবিবার বেজিং-এ বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের যে বিশাল শিখর সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে, সেখানেও ভারতের কোন হাই-প্রোফাইল প্রতিনিধি যোগ দিচ্ছেন না। শুধু বেজিং-এর ভারতীয় দূতাবাস থেকে কোনও প্রতিনিধি সেখানে যেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। এই রকম এক পরিস্থিতিতেই যৌথ সামরিক মহড়ার আইপিসি থেকে হঠাৎ চীন সরে দাঁড়াল। এ বছরের হ্যান্ড-ইন-হ্যান্ড মিলিটারি এক্সারসাইজও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।