বিগত কয়েক বছর ধরে ফিল্মি পলিটিক্সে অস্থির চলচ্চিত্র জগৎ। কথায় কথায় হামলা-মামলা-ব্যান, ছবি মুক্তি আটকে দেওয়া এসব এখনো চলছে। মূলত আশির দশক থেকেই ফিল্মি পলিটিক্স শুরু হয়। নির্মাতা কিংবা শিল্পীদের মধ্যে ঈর্ষা-হিংসা বিদ্বেষই এই ফিল্মি পলিটিক্সের কারণে। কীভাবে অন্য শিল্পীর ক্যারিয়ার ধ্বংস করা যায় কিংবা একজন নির্মাতার একটি ছবিকে কোনো উপায়ে লোকসানের কবলে ফেলা যায় এমন অপৎপরতার বেড়াজালে বেড়ে উঠেছে ফিল্মি পলিটিক্স। যা কয়েক বছর ধরে বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ঈদে ছবি মুক্তির ক্ষেত্রে এই ফিল্মি পলিটিক্স মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এমনই একটি ফিল্মি পলিটিক্সের ঘটনা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানালেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস। তার বর্ণনায়- ১৯৮৬ সাল, একদিন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও প্রদর্শক রাজমণি সিনেমা হলের কর্ণধার আহসানউল্লাহ মণি আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, আসন্ন ঈদে জোনাকী, মানসী ও রাজমণি সিনেমা হলে নায়করাজ রাজ্জাকের ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ ছবিটি প্রদর্শন করব বলে তাকে আমি কথা দিয়েছি। তখন আমি প্রদর্শক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। আমি বললাম ঠিক আছে। সব ব্যবস্থা করছি। ওদিকে ঘটল একটি বাজে ঘটনা। চলচ্চিত্র পরিবেশকরা সিদ্ধান্ত নিলেন ঈদে তারা কোনো সিনেমা হলে ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ চালাতে দেবেন না। তারা আজিজুর রহমান বুলির ‘হিম্মতওয়ালী’ ছবিটিই প্রদর্শন করবেন। সুদীপ্ত দাস বলেন, বুলির সঙ্গে যোগসাজশ করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা। কারণ তাদের ধারণা ছিল ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ রিলিজ হলে বিশেষ করে মহিলা দর্শকরা ছবিটি লুফে নেবে। এতে ব্যবসায়িকভাবে বিপাকে পড়তে পারে বুলির ‘হিম্মতওয়ালী’। এমতাবস্থায় হতাশ হয়ে রাজ্জাক সাহেব আহসানউল্লাহ মণি, প্রযোজক এ কে এম জাহাঙ্গীর খান ও আমাকে বললেন, এখন আমরা কী করব। এরই মধ্যে সহকারী জেলা জজ চতুর্থ কোর্টের আমার একজন পরিচিত লোক আমাকে জানালেন, চলচ্চিত্র পরিবেশক সমিতি ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ ঈদে যাতে মুক্তি পেতে না পারে সেজন্য একটি নিষেধাজ্ঞার মামলা করে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ করিয়েছে। বিষয়টি পরিবেশক সমিতি অত্যন্ত গোপনে করিয়েছিল। আমি বিষয়টি জেনে সেই রাতেই রাজ্জাক সাহেবের বাসায় গিয়ে তাকে তা জানালাম। তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিতে বললেন। তখন আমি সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়াসিন সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। পরে আমি চিন্তা করলাম, ইয়াসিন সাহেব মামলা চালাবেন ঠিকই; কিন্তু পরিবেশকরা যদি রাজ্জাক সাহেবকে কনভিন্স করে ফেলে তখন তো জোনাকী, মানসী ও রাজমণি সিনেমা হলের মালিকরা বেকায়দায় পড়বেন। এই হলগুলো ঈদে বন্ধ থাকতে পারে। তখন আমি বুদ্ধি করে তৎকালে বিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আইন আদালত’-এর উপস্থাপক অ্যাডভোকেট রেজাউর রহমানকে সিনেমা হল তিনটির পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট নিযুক্ত করলাম। পরদিন পৃথক দুটি মিস আপিল মামলা ১৪৭ ও ১৪৮ এর শুনানি হলো। এতে জেলা জজ আদেশ দিয়ে সহকারী জজ কোর্টের আদেশ স্থগিত করে দিলেন। কিন্তু এর অল্প সময় পরেই পরিবেশক সমিতির পক্ষের অ্যাডভোকেটকে দিয়ে জেলা জজের কাছে আবেদন করালে জেলা জজ মামলাটি ওই দিনই চূড়ান্ত শুনানির জন্য তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা জজ কোর্টে পাঠিয়ে দিলেন। সেদিন বিকালে শুনানি শুরু হলে আমাদের পক্ষ থেকে আমি একা ও পরিবেশকদের পক্ষে ছয়জন ডাকসাইটে নেতা কোর্টে উপস্থিত ছিলেন। তাদের অ্যাডভোকেট ভেবেছিলেন শুধু ১৪৭ নম্বর মামলাটির শুনানি করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করাতে পারলে ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ আর চলতে পারবে না। এমন অবস্থায় আমাদের অ্যাডভোকেট ইয়াসিন সাহেব শুনানি করার পর পরিবেশক সমিতির অ্যাডভোকেট যখন শুনানি করবেন তখন আমি বাইরে এসে ১৪৮ নম্বর মামলার খোঁজ নিলাম। জেলা জজ সাহেবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আমাকে জানালেন, মামলাটিতে কোনো স্থগিতাদেশ নেই। তখন আমি ১৪৮ নম্বর মামলাটি যে কোর্টে ১৪৭ নম্বর মামলার শুনানি চলছিল সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করালাম। সেটি দেখে জজ সাহেব বললেন, সিনেমা হল মালিকদের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রেজাউর রহমান যেহেতু কোর্টে উপস্থিত নেই এবং মামলাটিতে যেহেতু জেলা জজ সাহেব কোনো আদেশ দেননি তাই এর স্থগিতাদেশ বহাল আছে। এতে ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ ছবিটি ঈদে মুক্তি দিতে আর কোনো আইনগত বাধা রইল না। এ আদেশের পর পরিবেশক সমিতির নেতারা আমার ওপর খুব করে ঝাল ঝাড়লেন এবং হতাশ হয়ে চলে গেলেন। অবশেষে ঈদে ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ মুক্তি পেল এবং বাম্পার ব্যবসা করল। অন্যদিকে আজিজুর রহমান বুলির ‘হিম্মতওয়ালী’ ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ল। ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ মুক্তি পেয়েছিল মাত্র তিনটি হলে, বিপরীতে ‘হিম্মতওয়ালী’ মুক্তি পায় প্রায় দুই ডজন সিনেমা হলে। প্রচণ্ড জনপ্রিয়তার কারণে পরের সপ্তাহে ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ সারা দেশে এবং ‘হিম্মতওয়ালী’ তিনটি সিনেমা হলে পুনর্মুক্তি পেয়েছিল। এই অভাবনীয় সাফল্যে আমাকে ও প্রদর্শক সমিতির তখনকার জেনারেল সেক্রেটারি পনির ভাইকে রাজ্জাক সাহেব নিজের গাড়িতে করে কয়েক দিন তার বাসায় নিয়ে গেলেন এবং আমরা সেখানে বেশ আনন্দঘন সময় কাটিয়েছিলাম। এ দেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নায়ক, নায়করাজ রাজ্জাকের কাছ থেকে এমন সম্মান প্রাপ্তি আমার জীবনে এখনো শ্রেষ্ঠ পাওয়া হয়ে রয়েছে। তাঁর স্মৃতির প্রতি আমি বিনীত শ্রদ্ধা জানাই।
শিরোনাম
- সিরাজগঞ্জে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা, স্বামীর আত্মহত্যার চেষ্টা
- যমুনা নদীতে গোসলে নেমে দুইজন নিখোঁজ
- বিচারপতির বাসভবন, সুপ্রিমকোর্ট এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা
- তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বাধা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
- সেই অপমানের জবাবে যা বললেন সিরাজ
- ভারতে প্রবেশে বাধা, বিপাকে বাংলাদেশের দাবাড়ু রানী হামিদ
- সিলেট-সুনামগঞ্জের সীমান্তে ৭০ জনকে পুশইন
- কোহলির অবসর নিয়ে যা বললেন শাস্ত্রী
- পদ্মার এক পাঙ্গাসের দাম সাড়ে ২৮ হাজার টাকা
- ‘আওয়ামী লীগের ১৭ বছরে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার’
- জীবননগর সীমান্তে ২৬ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর
- আজও ২৫ জেলায় থাকবে মৃদু তাপপ্রবাহ
- চাঁদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযান, জরিমানা ও গাড়ি জব্দ
- 'ঘেউ ঘেউ করার জন্য ইউরোপ টোকাইয়া মাত্র ২০টা লোক পাইলো!'
- হেলিকপ্টারে প্রবাসী বর, দেখতে ভিড় হাজারো মানুষের
- চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতাল; স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিলেন চিকিৎসক-নার্সরা
- আকাশছোঁয়া দাম রণবীর-আলিয়ার নতুন বাড়ির!
- ত্রিকোণ প্রেম: চিকিৎসক, মা-বাবাসহ ৬ জনের হাতে খুন সরিফুল
- লালমনিরহাটে ফের ১২ জনকে পুশইনের চেষ্টা, বাধা দিল বিজিবি-গ্রামবাসী
- জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসে চমক ফারদিনের
ঈদে ফিল্মি পলিটিক্স
বিপাকে পড়েছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক
আলাউদ্দীন মাজিদ
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর