ঈদুল আজহার ছুটিতে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় ছিল উপচে পড়া ভিড়। বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানীবাসী ভাসছেন ছুটির আমেজে। মিরপুরে চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জিয়া উদ্যান, সংসদ ভবন এলাকা, উত্তরার দিয়াবাড়ী, হাতিরঝিল, শিশুমেলা, সোনারগাঁয়ের বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় নানান বয়সি মানুষের উৎসবমুখর উপস্থিতি দেখা গেছে। নভোথিয়েটারে এক ঘণ্টার একটি শো দেখতে দেড় ঘণ্টা তীব্র গরমে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে শত শত দর্শনার্থীকে। কিছুটা ভোগান্তি পোহালেও ঈদের আনন্দে সব কষ্ট ভুলে আনন্দিত নগরীর মানুষ। খিলগাঁও থেকে আসা তুহিন আরা বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ দিনের ছুটি পরিবারের সবাইকে নিয়ে কাটাতে পেরে আমরা আনন্দিত।’ পাশেই নগরবাসীর আরেক পছন্দের গন্তব্য জিয়া উদ্যান। সেখানে লেকে পা ভেজাচ্ছে শিশুরা। বড়রা মেতেছেন আড্ডায়। সব মিলিয়ে চিরচেনা সেই ঈদ আনন্দ। ভিড় ছিল জাতীয় চিড়িয়াখানাতেও। প্রাণপ্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে শিশুদের সঙ্গে এনেছেন অভিভাবকরা। বাঘ, সিংহ, হরিণ, ময়ূর, বানর, সাপ, পাখি, জলহস্তীসহ বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু দেখতে ভিড় জমান তারা। মগবাজার থেকে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বছরে এই এক-দুই দিন পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসার আনন্দই আলাদা। নানান রকম পাখি, বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ দেখে শিশুরা খুব খুশি।’

চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. আতিকুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১ লাখের মতো দর্শনার্থী এসেছেন। তবে সেটা তুলনামূলক কম। সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ করা যায় জিরাফ, ভাল্লুক, হাতি, বানর ও বাঘের খাঁচার সামনে।’ রাজধানীতে শিশুদের বিনোদন কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিএনসিসির ওয়ান্ডারল্যান্ড, সাবেক শিশুমেলা। রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত এ পার্কেও দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেছে। ওয়ান্ডারল্যান্ডের টিকিট সেলার স্নিগ্ধা হেলেন বলেন, ‘অনেক বেশি টিকিট বিক্রি হচ্ছে ঈদের ছুটিতে। এখানে শিশুদের অনেক রাইড আছে।’ হাতরঝিলেও অসংখ্য মানুষ ঘুরতে আসেন গতকাল। জান্নাত আক্তার নামে একজন বলেন, ‘এখানের দৃশ্য মনোরম তাই বাচ্চাদের নিয়ে আসা।’ ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশন, আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশন এবং মতিঝিল স্টেশনে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ঈদের ছুটিতে সোনারগাঁয়ের বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় নারায়ণগঞ্জ শহর ও এর আশপাশ এলাকা এবং রাজধানী থেকে মানুষ ঘুরতে আসেন। পানাম সিটি ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী কাস্টডিয়ান সিয়াম চৌধুরী বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে আশানুরূপ দর্শনার্থীসমাগম হয়েছে। দেশিবিদেশি পর্যটকসহ হাজারো দর্শনার্থী পানাম সিটিতে ভিড় জমিয়েছেন। পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য আনসার ও ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
কক্সবাজারে মেতেছেন ভ্রমণপিপাসুরা : কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, ঈদের টানা ছুটিতে চমৎকার পরিবেশ ও আবহাওয়াকে সঙ্গে করে কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন দেশিবিদেশি পর্যটকরা। পর্যটকের আনাগোনায় মুখর লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলি পয়েন্ট। লাইফগার্ড কর্মীদের লাল পতাকা উত্তোলন ও সতর্কতা মাইকিংয়ের প্রাণপণ চেষ্টাও পর্যটকদের দমাতে পারছে না। সতর্কতাসংকেত উপেক্ষা করে অনেকেই উত্তাল সাগরে নেমে পড়ছেন।
ফেনী থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা হাসিব বলেন, ‘সকাল থেকেই বিচে আছি, ভালোই লাগছে। অনেক মানুষ, স্বাভাবিক পথ চলতে সতর্ক থাকতে হচ্ছে। হোটেলের পরিবেশ খাবারদাবার সবকিছু পজিটিভ।’
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আওলাদ হোসেন কেনেডি জানান, ঈদের আগেই কক্সবাজারের অধিকাংশ আবাসিক হোটেল শতকরা ৬০ ভাগ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। এখন কক্সবাজারে শতভাগের কাছাকাছি রুম বুকিং চলছে। তিন দিনে পর্যটকের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন জানান, পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছেন।
পর্যটকে মুখর কুয়াকাটা সৈকত : কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, পর্যটকদের পদভারে মুখর হয়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। ঈদের ছুটিতে আসা পর্যটকদের আনন্দ-উন্মাদনায় পুরো সৈকতজুড়ে বিরাজ করছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত, সমুদ্রের ঢেউ আর লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ দেখে এসব পর্যটক মুগ্ধ। এদিকে পর্যটক সমাগম বাড়ায় পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও চাঙা হয়ে উঠেছেন।
স্থানীয়রা জানান, তীব্র গরমে একটু প্রশান্তি পেতে গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অনেকেই সমুদ্রের নোনাজলে গা ভাসিয়ে আনন্দ উল্লাস করেছেন। অনেকে আবার সৈকতে বসে উপভোগ করছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কেউবা আবার বিভিন্ন বাহনে চড়ে তিন নদীর মোহনা, লেম্বুরচর, শুঁটকি পল্লি, ঝাউবন, গঙ্গামতী চরসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্পট ঘুরে দেখছেন। ঈদের চতুর্থ দিনে পুরো সৈকতজুড়ে আগত পর্যটকরা ঈদ উৎসবে মেতেছেন।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তপন চন্দ্র রায় জানান, পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। এ ছাড়া পর্যটন স্পটগুলোতে বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।