১৯ জুলাই, ২০১৯ ১৮:০৯

ভারতে থাকার রেসিডেন্স পারমিট’এর মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে বিস্মিত তসলিমা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভারতে থাকার রেসিডেন্স পারমিট’এর মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে বিস্মিত তসলিমা

চলতি মাসেই ভারতে থাকার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে বিশিষ্ট লেখিকা তসলিমা নাসরিনের। সেই মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্জিও জানিয়ে ছিলেন তিনি। তার আবেদন ছিল ‘রেসিডেন্স পারমিট’ এর মেয়াদ অন্তত পাঁচ বছর বাড়ানো হোক। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সেই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে মাত্র তিন মাস। 

এ ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন তসলিমা নাসরিন। বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল সাইটে নিজের সেই বিস্ময়তার কথাও তুলে ধরেন। 

ট্যুইটারে তসলিমা লেখেন, ‘মাননীয় অমিত শাহজি (কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), ভারতে থাকার আমার রেসিডেন্স পারমিট মেয়াদ বৃদ্ধি করায় আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু সেই মেয়াদ কেবলমাত্র তিন মাসের জন্য বৃদ্ধি করায় আমি একটু অবাক হয়েছি।’ 

তসলিমার অভিযোগ, ‘আমি প্রতিবারই পাঁচ বছরের জন্য এই পারমিট বাড়ানোর জন্য আর্জি জানিয়ে আসছি কিন্তু আমাকে প্রতিবারই এক বছরের জন্য এই পারমিট দেওয়া হয়ে আসছে। মাননীয় রাজনাথ জি (রাজনাথ সিং, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে ৫০ বছরের রেসিডেন্স পারমিট দেওয়া হবে। ভারত আমার একমাত্র বাড়ি। আমি নিশ্চিত যে আপনি বিষয়টি দেখবেন।’ 

এদিকে তসলিমার ভিসা ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক রঙ দিয়ে বিতর্ক বাড়িয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক আইএএস কর্মকর্তা সাহ ফয়সল। তসলিমার ট্যাগ করে ফয়সল ট্যুইট করে বলেন ‘এটা হচ্ছে না। কারণ আপনি একজন মুসলিম।’ আর ফয়সলের ট্যুইটের পরই সোশ্যাল মিডিয়াতে তাকে নিয়ে তোপ চলছে। 

রোহিত নামে একজন লিখেছেন, ‘তসলিমাকে একটি মুসলিম রাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে। কলকাতা শহর থেকে তাকে তাড়ানো হয়েছে মুসলিমদের বিরোধিতার কারণে। তার বইকে নিষিদ্ধ করার পেছনেও রয়েছে মুসলিমদের বিরোধিতা। ভারতে তার থাকা নিয়েও মুসলিম সমাজ বিরোধিতা করে আসছে। অথচ হিন্দু অধ্যুষিত এই ভারতেই তাকে আশ্রয় দিয়েছে।’ 

রাম নামে এক ব্যক্তি প্রশ্ন তুলেছেন ‘ভারতের দুই প্রতিবেশি মুসলিম রাষ্ট্রই চায় না তসলিমা আমাদের দেশে থাকুক। হিন্দু সংখ্যাগুরু রাষ্ট্র ভারতই তসলিমার দেশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রগুলো তাকে চায় না।’ 

উল্লেখ্য নারীর অধিকারের পক্ষে এবং ধর্মীয় অনাচারের বিরুদ্ধে লেখা এবং বলার জন্য অনেক বছর ধরেই মৌলবাদীদের চক্ষুশূল তসলিমা। ১৯৯৩ সালে তার বিতর্কিত ‘লজ্জা’ বইটি প্রকাশের পরই মৌলবাদীদের রোষানলে পড়েন তসলিমা। একসময় চাপে পড়ে বইটি নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ সরকার। খুনের হুমকিও দেওয়া হয় তসলিমাকে। শেষমেষ মৌলবাদীদের হাত থেকে বাঁচতেই ১৯৯৪ সালে তাকে দেশ ছাড়তে হয়। এরপর কখনও ভারত, কখনও সুইডেন কিংবা আমেরিকা এই ছিল তার ঠিকানা। 

পরে ২০০৪ সালে তিনি আশ্রয় নেন কলকাতায়। কিন্তু ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন বাম সরকারের আমলে মৌলবাদী মুসলিমদের বিরোধিতার কারণেই একপ্রকার বাধ্য হয়েই কলকাতা ছাড়তে হয়েছিল তসলিমা নাসরিনকে। তারপর থেকেই দীর্ঘ কয়েকবছর দিল্লিতে পুলিশি ঘেরাটোপে বসবাস করে আসছেন তসলিমা এবং সেই থেকে প্রতিবছরই তার ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়ে আসছে। 


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর