টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত দক্ষিণ ভারতের দুই রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা। বাড়ছে নদীর পানি। ফলে একাধিক জায়গায় বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বর্ষণজনিত কারণে দুই রাজ্যে এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্ধপ্রদেশে ১২ জন এবং তেলেঙ্গানায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের পানির তোড়ে একাধিক মানুষের ভেসে যাওয়ার খবর এসেছে। ফলে মৃত্যুর খবর আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। তেলেঙ্গানাতেও একজনের নিখোঁজ হওয়ার খবর এসেছে। দুই রাজ্য মিলিয়ে বিপর্যস্ত কয়েক লাখ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক লাখ হেক্টর কৃষি জমি।
নিম্নচাপের কারণে রবিবার থেকে অবিরাম বৃষ্টি। আর তাতেই বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, সড়কের চিহ্নমাত্র নেই। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। কোথাও বুক সমান পানি, কোথাও আবার একটু কম। বিপর্যস্ত যান চলাচল। ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
ইতিমধ্যেই উদ্ধার কাজে নেমেছে রাজ্য এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা টিমের সদস্যরা। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, দুই রাজ্যে উদ্ধার কাজ এবং ত্রাণ সরবরাহের জন্য জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দলের ২৬টি টিমকে মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার মানুষকে। রাজ্যটির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বিজয়ওয়াড়া ও গুন্টুর। বিজয়ওয়াড়া-গুন্টুর জাতীয় সড়ক এবং বিজয়ওয়াড়া হায়দরাবাদ জাতীয় সড়ক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
টানা বর্ষণে হায়দরাবাদ শহরের একাধিক জায়গায় পানি উঠেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে সোমবার পর্যন্ত শহরের প্রতিটি স্কুল কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা দুই রাজ্যের মধ্যে সংযোগকারী সেতু, সড়ক সবই পানির তলায়।
দক্ষিণ মধ্য রেলের পক্ষে ১৪০টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ৯৭টি ট্রেনের গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে প্রায় ৬ হাজার যাত্রী বিভিন্ন রেল স্টেশনে আটকা পড়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু এবং তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভানাথ রেড্ডির সাথে টেলিফোনে কথা বলে দুই রাজ্যের পরিস্থিতির খোঁজখবর নিয়েছেন এবং কেন্দ্রের পক্ষে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দুর্গত এলাকায় গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির পরিদর্শন করেছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। সোমবার বিজয়ওড়ার অজিত সিং নগরে গিয়ে দুর্গতদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন।
তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভানাথ রেড্ডি রাজ্যের সমস্ত মন্ত্রী এবং শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধার কাজ তদারকি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। রাজ্যটির অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা খাম্মাম’র স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ সরকারি সহায়তা সেভাবে পৌঁছে না। একাধিক মানুষ ঘরবন্দী হয়ে রয়েছেন। তারা সকলেই ঘরের ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন।
বুদামেরু ভাগুসহ অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানার বেশ কয়েকটি নদীর পানির স্তর বেড়েছে। ফলে নদীর তীরবর্তী মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার দিন অন্ধ্রপ্রদেশের একাধিক জায়গায় বজ্রপাতসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ওই একই পূর্বাভাস রয়েছে তেলেঙ্গানা রাজ্যের ক্ষেত্রেও।
বিডি প্রতিদিন/এমআই