ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে নিহত চিকিৎসকের দেহে ছিল একাধিক আঘাতের চিহ্ন। তার দেহে ‘যৌন হেনস্তা’র প্রমাণও মিলেছে। এমনটাই রয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। তাতে বলা হয়েছে, তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল। এমনকি তার যৌনাঙ্গে জোরপূর্বক কিছু প্রবেশ করানো হয়েছিল।
টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, ওই চিকিৎসকের শরীরের বহিরাংশে ১৬টি ও ভিতরে ৯টি ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ৯ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট থেকে ৭টা ১০ মিনিটের মধ্যে এই ময়নাতদন্ত করা হয়। আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসকরাই এ ময়নাতদন্ত করেন। গতকাল সেই প্রতিবেদন প্রকাশ পায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নাক-মুখ বন্ধ করে শ্বাসরোধ করার কারণেই (ওই চিকিৎসকের) তার মৃত্যু হয়েছিল। গাল, ঠোঁট, নাক, ঘাড়, বাহু, হাঁটু ও যৌনাঙ্গে বাহ্যিক ক্ষত পাওয়া গেছে। অভ্যন্তরীণ ক্ষত পাওয়া গেছে ঘাড়, মাথার ত্বক ও অন্যান্য অংশের পেশিতে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, সব আঘাত মৃত্যুর আগের। এর অর্থ হলো, মারার আগে তাকে সীমাহীন কষ্ট দেওয়া হয়েছে। গত ৯ আগস্ট উত্তর কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাকক্ষে এক নারী চিকিৎসকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ৩৬ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন শেষে ওইদিন রাতে তিনি সেখানে বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন। ৩১ বছর বয়সি ওই শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসকের মৃতদেহটি ছিল রক্তাক্ত, শরীরের নানা জায়গায় জখমের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় কলকাতার পাশাপাশি ভারতজুড়ে চিকিৎসকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এখনো আন্দোলন চলছে। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কলকাতা পুলিশকে। তাদের তদন্ত সমালোচনার মুখে পড়ে। এরপর তা ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
চিকিৎসকদের ধর্মঘট অব্যাহত : ভারতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন হাজার হাজার চিকিৎসক। গতকালও তারা কর্মবিরতি শেষ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ফলে হাসপাতাল সেবা ব্যাহত হচ্ছে। সহকর্মীর নিরাপত্তা এবং দ্রুত অপরাধ তদন্তের দাবিতে গত সপ্তাহ থেকে চলা এই প্রতিবাদ কর্মসূচি এখনো অব্যাহত রয়েছে। এদিকে সরকার চিকিৎসকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি কমিটি গঠনের কথা বলেছে। তবে বিক্ষোভকারী চিকিৎসকরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল।
চিকিৎসকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রবিবার কলকাতার রাজপথে পশ্চিমবঙ্গের দুটি বড় ফুটবল ক্লাবের হাজার হাজার সমর্থক ‘আমরা বিচার চাই’ স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন।
প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা, রাজধানী নয়াদিল্লি এবং পশ্চিম ভারতের গুজরাটেও চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।