১৮ অক্টোবর, ২০১৮ ১৮:৩০

ঋতুবতী নারীদের মন্দিরে প্রবেশ নিয়ে উত্তাল শবরীমালা, ১৪৪ ধারা জারি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ঋতুবতী নারীদের মন্দিরে প্রবেশ নিয়ে উত্তাল শবরীমালা, ১৪৪ ধারা জারি

শবরীমালা মন্দিরে ঋতুবতী নারীদের প্রবেশ নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের কেরল রাজ্য। সব বয়সী নারীই শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন বলে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় দেওয়ার পর সেই প্রক্রিয়া শুরু হতেই রাজ্যটির বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। শীর্ষ আদালতের সেই রায়ের পর বুধবারই প্রথমবারের মতো মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয়। আর তারপরই অশান্তি চরমে ওঠে। আদালতের সেই আদেশকে কার্যত উড়িয়ে দিয়েই বিক্ষোভে অংশ নেন মন্দির রক্ষা কমিটির সদস্যরা। ঋতুবতী নারীরা যাতে কোনোভাবেই সেখানে পৌঁছাতে না পারেন তা নিশ্চিত করার জন্য অনেকে চেষ্টা করেন। 

বুধবার বিকেল ৫টায় মন্দির খোলার আগেই গণআত্মহত্যার হুমকি দেন ভগবান আয়াপ্পার ভক্তরা। তাদের দাবি- সুপ্রিম কোর্ট যতই নির্দেশ দিক, শবরীমালা মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। কমিটির বিক্ষোভ ও আন্দোলনের ফলে এখনও পর্যন্ত কোনো নারীই ওই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি বলে জানা গেছে। বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটকও করা হয়। কিন্তু বিক্ষোভ থামছে না। 

বৃহস্পতিবার আরেক ধাপ এগিয়ে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে আধা বেলা হরতালের ডাক দেওয়া হয়। হরতালের জেরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকান, বাজার। রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাও কম। এই বন্ধকে সমর্থন করেছে বিজেপিও। স্বাভাবিকভাবেই এই ধরনের ঘটনার পিছনে রাজনীতি দেখছে কেরালার বাম সরকার। 

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজনের অভিযোগ ‘এই অশান্তির পিছনে সঙ্ঘ পরিবার ও আরএসএস-এর হাত রয়েছে।’

পাহাড় ঘেরা মন্দিরে ওঠার আগে ভক্তদের কয়েকটি বেস ক্যাম্পে ভক্তদের বিশ্রাম নিতে হয়। কিন্তু সেই বেস ক্যাম্প থেকে মন্দিরে ওঠার রাস্তায় ভক্তদের ওপর বিক্ষোভকারীরা পাথর নিক্ষেপ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে এক নারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। শবরীমালা মন্দিরে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গণমাধ্যমের কর্মীরাও আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। 

এছাড়া গাড়িতে ভাঙচুর শুরু হলে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকালেও নিউইয়র্ক টাইমসের দুই সাংবাদিকও বিক্ষোভের মুখে পড়ে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। পরে পুলিশি নিরাপত্তায় তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। 

এদিকে, মন্দির চত্বরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে কেরল রাজ্য প্রশাসনও আরও তৎপর হয়েছে। বৃহস্পতিবার সান্নিধানম, পাম্বা, নিলাক্কল, এলাভুঙ্গল-এই চারটি জায়গায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। ওই জায়গাগুলোতে একসঙ্গে চারজনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গুজব ও ধর্মীয় বিদ্বেষ সম্পর্কিত খবর ঠেকাতে নিলাক্কল ও পাম্বা এলাকায় সোশ্যাল সাইটের ওপরও পুলিশের পক্ষ থেকে নজরদারি চালানো হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, এই শবরীমালা মন্দিরে ভগবান আয়াপ্পাকে পূজা করা হয়। প্রতি বছর প্রায় ৫ কোটি ভক্ত এখানে আসেন। মন্দিরে পূজা দিতে গেলে ৪১ দিনের একটি রীতিও পালন করতে হয়। কিন্তু ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পর্যন্ত নারীরা ঋতুবতী হওয়ার কারণে এই নিয়ম পালন করতে পারেন না। আর তাই প্রায় ৫৩ বছর ধরে এই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারতেন না নারীরা। এরপরই ওই নিয়মের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে একাধিক মামলা করা হয়। তার প্রেক্ষিতেই শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেন সব বয়সের নারীই এবার থেকে ওই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন। 

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর