ভারতের ওড়িশায় আছড়ে পড়ল স্লাইকোন ‘ফণী’। শুক্রবার সকালে ওড়িশার উপকূলবর্তী এলাকা পুরীতে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড়টি। ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার। এর ফলে পুরী ছাড়াও ওড়িশার গোপালপুর, পারাদ্বীপের মতো জায়গায় ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। একটানা বর্ষণের ফলে ওই সমস্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক জায়গায় গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ার খবরও পাওয়া গেছে।
ভুবনেশ্বরের আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের মহাপরিচালক এইচ আর বিশ্বাস জানিয়েছেন ‘শুক্রবার সকাল ৮টায় ওড়িশার পুরীতে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে এবং আগামী তিন ঘণ্টা এটা স্থায়ী থাকবে।’
প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম পূর্বাভাস থাকায় ইতিমধ্যেই পুরী, জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রপাড়া, ভদ্রক, বালাসোর, গজপতি, কটক, ময়ূরভঞ্জ সহ ওড়িষার ১১টি উপকূলবর্তী জেলা থেকে ১১ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে একাধিক ত্রাণ শিবির।
গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে কন্ট্রোল রুম খুলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।
ওড়িশার পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলাতেও ফণীর তাণ্ডব শুরু হয়েছে। বজ্রপাতসহ ঝড়, সঙ্গে প্রবল বর্ষণে একাধিক বড় বড় গাছ উপড়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে বেশকিছু কাঁচাবাড়ি। উপড়ে পড়েছে বিদুতের খুঁটি।
একাধিক নারকেল গাছে আগুন ধরে গেছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে রাজ্যটির উত্তর উপকূলবর্তী এলাকায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে ওড়িশা হয়ে পশ্চিমবঙ্গেও ঢুকে পড়েছে ফণী। শুক্রবার ভোর থেকে আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। আর সকাল হতেই শুরু হয়ে যায় বৃষ্টিপাত। রাজ্যটির কলকাতা, উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, মেদিনীপুর, নদীয়াসহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে চলছে হাওয়ার দাপট।
এরই দীঘার সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমস্ত পর্যটকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে দক্ষিণবঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। রাজ্য প্রশাসন, রেল, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন এজেন্সি ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি আটকাতে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
বৃহস্পতিবারই নবান্নে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যটির প্রধান সচিব মলয় দে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুমও।
ফণীর দাপটে শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দর বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে রাশ টানা হয়েছে রেল সার্ভিসেও। একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেন বাতিলের পাশাপাশি বেশকিছু ট্রেনের যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে রাজ্যে চলমান লোকসভা নির্বাচনী পর্বের মধ্যে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হওয়ায় সমস্যায় পড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। অনেকেই তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও আগামী ৪৮ ঘণ্টা তার নির্বাচনী প্রচারণা বাতিল করেছেন। এই মুহূর্তে তিনি রয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খড়গপুরে।
ট্যুইট করে তিনি জানান ‘২৪/৭ আমরা গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। আমি সমস্ত মানুষকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আগামী দুইটি দিন আপনারা সতর্ক থাকুন ও নিজেদের নিরাপদে রাখুন।’
ইতোমধ্যে আগামী দুইদিন রাজ্যের সমস্ত স্কুলে ছুটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম