ভারতের রাষ্ট্রীয় বেতার সংস্থা ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’ এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বেতার সংস্থা ‘বাংলাদেশ বেতার’ তাদের নিজেদের মধ্যে অনুষ্ঠান বিনিময়ের জন্য দিনে চার ঘন্টা সময় দেওয়ার ব্যাপারে সহমত পোষণ করেছে। এর মধ্যে সকালে দুই ঘণ্টা এবং সন্ধ্যায় দুই ঘণ্টা সময় রাখা হয়েছে।
আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে উভয় দেশের বেতার সম্প্রচার সংস্থার মধ্যে এই অনুষ্ঠান বিনিময় শুরু হচ্ছে।
২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকালেই দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতেই যৌথভাবে রেডিও কার্যক্রম শুরুর ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সে অনুযায়ী অনুষ্ঠান বিনিময় নিয়ে ২০১৮ সালের এপ্রিলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ওই সমঝোতা স্মারক কার্যকর করার পদ্ধতি নিয়ে এবং কারিগরী দিক নিয়ে আলোচনার জন্যই বুধবার কলকাতার এক পাঁচ তারকা হোটলে (ললিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল) আকাশ বাণী ও বাংলাদেশ বেতারের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে অল ইন্ডিয়া রেডিও’এর মহানির্দেশক ফায়াজ শাহরিয়র জানান, ‘ভারত ও বাংলাদেশের ভাবাবেগ, আকাঙ্ক্ষা, দর্শনকে একীভূত করার প্রচেষ্টা হচ্ছে। প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ বেতারের মধ্যে এ সম্পর্কিত একটা এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) স্বাক্ষরিত হয়েছে। ওই চুক্তি মোতাবেক বেশ কিছু নিয়মনীতি আছে- মূলত সেই বিষয়গুলো নিয়েই আমাদের মধ্যে এ দিন সদর্থক আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে ঠিক হয়েছে উন্নত পদ্ধতির মাধ্যমে দুই দেশের বেতার তাদের অনুষ্ঠানগুলো বিনিময় করবে এবং এই অনুষ্ঠান বিনিময়ের জন্য উভয় দেশের দিনে কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় দেবে। এতে দুই দেশের মানুষের মধ্যে পারষ্পরিক আদান-প্রদান সুদৃঢ় হবে সেই সঙ্গে উভয় দেশের প্রাচীন সংস্কৃতি, সভ্যতা তুলে ধরার সুযোগও বাড়বে। এটা বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে নতুন নিদর্শন হয়ে দাঁড়াবে।’
তিনি আরও বলেন ‘রেডিও সম্প্রচারের ক্ষেত্রে দুই দেশের বেতারের একটা গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে। উভয় দেশই এবার একযোগে মিলিত হয়ে তাদের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। গোটা জাতির কাছে সত্য তুলে ধরবে। আমরা আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি বিবৃত করতে চাই না। কারণ আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিই নিজ নিজ দেশবাসীর কাছে সাহসের প্রতীক। আমরা উভয় দেশের মানুষ একসাথে থাকছি এবং ভবিষ্যতেও থাকতে চাই।’
বাংলাদেশ বেতারের মহানির্দেশক নারায়ণ চন্দ্র শীল জানান, ‘গত বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ বেতার ও প্রসার ভারতীর মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেই চুক্তি অনুসারে উভয় দেশের অনুষ্ঠান ও সংবাদ বিনিময় হবে। সেই ব্যাপারেই আমরা প্রস্তুতি বৈঠকের আয়োজন করেছিলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে উভয় দেশের রেডিওতে দুই দেশের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে। এই সম্প্রচারের পূর্বে একটি বিশাল মাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে যেখানে দুই দেশের তথ্যমন্ত্রীসহ সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, শিল্পীরা উপস্থিত থাকবেন। আমাদের অনুষ্ঠানের বিষয় কি হবে, সংবাদের বিষয় কি হবে, বাংলাদেশের অনুষ্ঠান প্রসার ভারতীয় কিভাবে গ্রহণ করবে এবং তাদের অনুষ্ঠান কিভাবে বাংলাদেশ বেতার গ্রহণ করবে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’
এদিনের এই প্রস্তুতি বৈঠক খুবই ফলপ্রসু বলে আখ্যায়িত করে নারায়ণ চন্দ্র শীল আরও বলেন, ‘ভারতের দিক থেকে যে প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশের তরফে যে প্রস্তাব দিয়েছি তার প্রত্যেকটিতে আমরা সহমত পোষণ করেছি। কোনও বিষয় নিয়েই আমাদের দ্বিমত পোষণ হয়নি। এটা খুব আনন্দের সংবাদ। আমরা চাইছি যে বাংলাদেশের বিজয়ের মাসে উল্লাসের মতই আমরা এই অনুষ্ঠানটি শুরু করতে পারবো।’
বিডি প্রতিদিন/কালাম