পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ (এসএসসি স্ক্যাম) দুর্নীতি মামলায় ফের বিপুল অংকের অর্থের খোঁজ পেল ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বুধবার সকাল থেকে রাজ্যটির একাধিক জায়গায় অভিযান চালায় ইডির কর্মকর্তারা। যার মধ্যে অন্যতম রাজ্যের সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী ও বর্তমান শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখার্জির বেলঘরিয়ার একটি বহুতল আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে। অর্পিতার পৈতৃক বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়েছে।
কলকাতার টালিগঞ্জের পর এবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বেলঘড়িয়ার রথতলায় অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল অর্থ।
রথতলায় "ক্লাব টাউন হাইটস" নামে একটি বহুতল আবাসনে অর্পিতার নামে দুটি ফ্ল্যাট (Block: 2, Room 2/A & Block: 5, Room 8/A) রয়েছে। সেখানেই এদিন সকালের দিকে অভিযানে আসে ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা। কিন্তু ফ্ল্যাট দুটি বন্ধ থাকায় বেশ কিছুক্ষণ তারা বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে। এরপর একজন চাবিওয়ালাকে ডাকা হয়। তিনি এসে বেশ কিছুক্ষণ প্রচেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। এরপরই তালা ভেঙে ওই দুটি ফ্ল্যাটে ঢুকে ইডির কর্মকর্তারা।
তারই একটি ফ্ল্যাট ব্লক-৫ এ বিপুল অর্থের সন্ধান পায় ইডি। উদ্ধারকৃত ওই রুপির মধ্যে বেশিরভাগই রয়েছে প্যাকেট প্যাকেট ২০০০ ও ৫০০ রুপির নোট। এই বিপুল অর্থ গোনার জন্য চারটি ক্যাশ কাউন্টিং মেশিন নিয়ে আসা হয়। শুরু হয় গণনা। বিপুল অর্থ নিয়ে যাওয়ার জন্য রাত ১১টা নাগাদ ক্যাশ বহনকারী একটি গাড়ি আসে ওই ফ্ল্যাটে। এরপর ট্রাঙ্ক করে ওই রুপি নিয়ে যাওয়া হবে। ইডির তরফ থেকে রুপির যে ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে তাতে অর্থের পরিমাণ আনুমানিক ৪০ কোটি রুপি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ধার করা হয় প্রচুর স্বর্ণের জিনিস এবং অন্যান্য নথি। যদিও ইডির তরফে এখনো কোনো সরকারি বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
এই আবাসনের অন্য ফ্ল্যাটটি এদিন সিলগালা করে দেয় ইডির কর্মকর্তারা। সেখানে একটি নোটিশও টাঙিয়ে দেয় তারা।
এর পাশাপাশি অর্পিতার বেলঘরিয়ার দেওয়ান পাড়ায় পৈতৃক বাড়িতেও এদিন ইডি কর্মকর্তারা যায়। সেখানেও প্রথমে ইডি কর্মকর্তাদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেন অর্পিতার বৃদ্ধা মা মিনতি মুখার্জী। পরে তাকে বুঝিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে অভিযান চালায়। যদিও সেখান থেকে আপত্তিকর কোনো নথি বা জিনিস পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, এই দুর্নীতি মামলায় গত ২২ জুলাই মধ্য রাতে গ্রেফতার করা হয় মন্ত্রী পার্থকে। আদালতের নির্দেশের বর্তমানে ইডি হেফাজতে রয়েছেন তিনি। ওই দিন পার্থের দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার বাড়িতে তদন্ত চালায় ইডির কর্মকর্তারা। কিন্তু তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই দিনেই অর্পিতার টালিগঞ্জের করুণাময়ী এলাকায় ডায়মন্ড সিটি আবাসনে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হয় ২১ কোটি ৯০ লাখ রুপি। রুপি ছাড়াও অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে বাজেয়াপ্ত হয় ৭৯ লক্ষ রুপির গয়না, ৫৪ লক্ষ রুপির বিদেশি মুদ্রা, ২০টি মোবাইল। অর্পিতার বাড়িতে টাকার পাহাড়ের মাঝেই উচ্চ শিক্ষা দফতরের খামও পাওয়া যায়। এর পরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় অর্পিতাকে। পরে ২৪ জুলাই তাকে গ্রেফতার করে ইডি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে নবম ও দশম শ্রেণিতে শিক্ষক, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদেনিয়োগ মামলায় প্রায় ৫০০ কোটি রুপির দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। এই আর্থিকদুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন সময়েই। মেরিট লিস্টে নাম না থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র রুপির জোরে চাকরি পাইয়ে দেবার অভিযোগ ওঠে। ওই অভিযোগ আসার পরেই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের ভার হাতে নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তারা মূলত এই মামলার ফৌজদারির দিকটি দেখছে। কাদের হাত ধরে এই দুর্নীতি হয়েছে তা খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছে সিবিআই-এর তদন্তকারী কর্মকর্তারা। অন্যদিকে এই মামলায় আর্থিক দুর্নীতির দিকটি খতিয়ে দেখছে ইডির কর্মকর্তারা।