কীভাবে একটা ভাল নকশা (ডিজাইন) জীবন পরিবর্তনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে- সে সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে কলকাতা থেকে ঢাকা পায়ে হেঁটে আসবেন কলকাতা-ভিত্তিক স্থপতি গীতা বালাকৃষ্ণান। শনিবার সকলের দিকে কলকাতার ৯, বঙ্গবন্ধু সরণীতে অবস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন প্রাঙ্গণ থেকে হাঁটা শুরু করেন বাংলাদেশের উদ্দেশে।
এই উপলক্ষে ডেপুটি হাইকমিশনে একটি ছোট্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পতাকা নাড়িয়ে এই অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন ডেপুটি হাইকমিশনের আন্দালিব ইলিয়াস।
প্রায় ৩০৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আগামী ৭ নভেম্বর নাগাদ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছেন গীতা। তার অভিমত, পায়ে হেঁটে যাত্রার মধ্য দিয়ে স্থাপত্য এবং স্থপতি গোষ্ঠীর ভূমিকা, সমাজের প্রতি তাদের অবদান, এবং নকশার মাধ্যমে তারা যে বিষয়গুলি সমাধান করার লক্ষ্য রাখে- তার উপর আলোকপাত করবে।
যৌথভাবে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন, দ্য কাউন্সিল অফ আর্কিটেকচার (CoA), ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেক্টস (IIA), ইনস্টিটিউট অফ আরকিটেক্টস বাংলাদেশ (IAB), ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ স্টুডেন্টস আর্কিটেকচার (NASA), আর্কিটেক্টস রিজিওনাল কাউন্সিল এশিয়া (arcasia)- এর সহযোগিতায় 'ইথোস ফাউন্ডেশন' এই যাত্রাপথের উদ্যোগ নিয়েছে।
তবে এবারই নয়, এর আগে একই উদ্দেশ্য নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা থেকে দিল্লি গিয়েছিলেন গীতা। ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ এপ্রিল- কলকাতা থেকে প্রায় ১৭০০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে দিল্লি পৌঁছান তিনি। তারই বর্ধিত যাত্রার অংশ হিসেবে কলকাতা থেকে ঢাকা যাত্রার নাম রাখা হয়েছে ২.০ (টু পয়েন্ট জিরো)।
বারাসাত-হাবড়া-চাঁদপাড়া-বনগাঁ হয়ে আগামী ২৬ অক্টোবর পেট্রাপোল সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবেন গীতা। এরপর লাউজানি- নড়াইল-লোহাগাড়া-ভাঙ্গা-শিবচর-মাওয়া-সোলেপুর-যাত্রাবাড়ী হয়ে জাতীয় সংসদ ভবনে পৌঁছবেন গীতা। হাঁটার জন্য মূলত প্রতিদিন সকালবেলাটাই বেছে নিয়েছেন তিনি। দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টা হাঁটবেন তিনি।
যাত্রা পথে কখনো স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন, কখনো আবার নারী গোষ্ঠী কিংবা চায়ের দোকানে বসেও সেইসব মানুষের কথা শুনবেন, নিজের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নেবেন আবার ঝিনাইদহে আগা খান পুরস্কারপ্রাপ্ত তরুণ স্থপতি খোন্দকার হাসিবুল কবিরের সাথে সাক্ষাৎ করবেন গীতা।
গীতা জানান, এই যাত্রার মূল উদ্দেশ্য হলো একটা ভালো স্থাপত্য চিন্তা কীভাবে মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে পারে। তারই প্রচারণার অংশ হিসেবে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন গীতা।
প্রায় ২০ বছর ধরে এই পেশার সাথে যুক্ত থাকার কারণে গীতার ধারণা যারা আর্কিটেকচার বা স্থপতিরা সমাজকে নিয়ে কম কাজ করেন। তারা যখন কাজ করতেন তখন সাধারণ মানুষ তাদেরকে চেনেন না বা তারাও সাধারণ মানুষের সাথে খুব একটা মেলামেশা করেন না। ফলে কর্মক্ষেত্রে খানিকটা একাকীত্ব গীতাকে এই নতুন ভূমিকায় উজ্জীবিত করে তুলেছে।
আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই যাত্রা পথের শিরোনাম রাখা হয়েছে "Unity through design" অর্থাৎ "নকশার মধ্যে দিয়ে একতা বৃদ্ধি"।
গীতার অভিমত, এই যাত্রার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ হবে। একই অভিমত পোষণ করেছেন কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস। তিনি বলেন, ‘গীতার এই জার্নির মধ্য দিয়ে ভারত বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করা, পিপুল টু পিপল কন্টাক্ট বৃদ্ধি পাবে’।