পাখি, পানি বা বাতাসের যেমন সীমানা হয় না, তেমনিই বাঙালির শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি কিংবা বাংলা ভাষারও কোনো সীমানা হয় না। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পদ্মার দুই পাড়ের বাঙালিরা মিলিত হল কলকাতায়। গান, আড্ডা, গল্প, আলাপচারিতা- সব মিলিয়ে পরিণত হয়েছে এক মিলনমেলায়। আয়োজন করেছিল কলকাতার ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাব। ‘সীমানা পেরিয়ে আমরা বাঙালি’ শিরোনামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল কলকাতার অভিজাত স্প্রিং ক্লাবে।
শনিবার সকালের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী রথীন ঘোষ, কক্সবাজার-৩ এর সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সারোয়ার কমল, কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তী প্রমুখ।
দর্শকাশনে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেবজ্যোতি চন্দ, মধ্যমগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান নিমাই ঘোষ, মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রাপ্ত সিনিয়র সাংবাদিক দিলীপ চক্রবর্তী, কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীর সুর, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল বাবু, বাংলা ট্রিবিউন এর সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, পশ্চিমবঙ্গের ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি সঈদ আনোয়ার মাকসুদসহ অন্যরা।
এদিনের অনুষ্ঠানের শুরুতে রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. কঙ্কনা মিত্র। এরপর ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাবের তরফে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশেনের মাধ্যমে ক্লাবের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হয়। পরে একইভাবে দুই বাংলার মন্ত্রীদেরও তাদের কর্মজীবনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হয়। এরপর ক্লাবের তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হয় দুই মন্ত্রীকে। সেই সাথে সংবর্ধনা জানানো হয় সাইমুম সারোয়ার কমল, আন্দালিব ইলিয়াস ও কিংশুক চক্রবর্তীকে।
তথ্যমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করেন কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর ও সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক, উত্তরীয় পরিয়ে দেন ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি সত্যজিৎ চক্রবর্তী, শুভেচ্ছা পত্র তুলে দেন ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাবের মেন্টর পরিতোষ পাল, স্মারক দেন সত্যজিৎ চক্রবর্তী এবং কলকাতার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি তুলে দেন ইন্দো বাংলা ক্লাবেব সদস্য দীপক মুখার্জি।
অন্যদিকে খাদ্যমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করেন ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তী, উত্তরীয় পরিয়ে দেন ক্লাব সদস্য ভাস্কর মুখার্জি, শুভেচ্ছা পত্র দেন ক্লাব শুভজিৎ পুততুন্ড, স্মারক তুলে দেন ক্লাবের আহ্বায়ক ভাস্কর সর্দার ও মিষ্টি তুলে দেন ক্লাব সদস্য সুব্রত আচার্য।
সংবর্ধনা পর্ব শেষে দুই মন্ত্রীর হাত ধরে উদ্বোধন হয় ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাবের "ওয়েবসাইট" এর। মাউসে ক্লিক করে "www.indobanglapressclub.com"
ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন তারা।
এর পর শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। স্বাগত রাখেন ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তী। তিনি বলেন, খুব কম সময়ের মধ্যে আমাদের প্রেস ক্লাবের সাফল্য- কোন একক ব্যাক্তির নয়, সকল সদস্যের সহযোগিতায় এটি সফলতা এসেছে।
খাদ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটা মধুর সম্পর্ক আছে। মমতা ব্যানার্জি শেখ হাসিনাকে দিদি বলে সম্বোধন করেন। তেমনি বাংলাদেশের সাথে ভারতের মধ্যেও একটা গভীরতর সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিনিধিদের উচিত সেই সম্পর্ক আরও মজবুত রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।
ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাবের ‘সমৃদ্ধি’ কামনা করে হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই প্রেস ক্লাবের মাধ্যমে দুই দেশের গণমাধ্যমের মধ্যেই নৈকট্য বাড়বে তা নয়, দুই দেশের মানুষের মধ্যেও নৈকট্য আরও সুদৃঢ় করতে এই প্রেসক্লাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে’।
তার অভিমত, রাজনৈতিক সীমারেখা আমাদেরকে বিভেদ করে দিলেও বা কাঁটাতারের বেড়া আমাদের একে অপরের থেকে আলাদা করে দিলেও আমাদের ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, আবেগ, উচ্ছ্বাস, ভালবাসা বিভক্ত করতে পারেনি। আমরা দুই বাংলার মানুষই বাঙালি। একই ভাষায় কথা বলি, একই ভাষায় গান গাই, একই পাখির কলতান শুনি।
আর এই আবেগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গে আসলে মনে হয় আমার হারিয়ে যাওয়া ভাইকে খুঁজে পেয়েছি।
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মনে করে গণমাধ্যমের বিকাশের উপরেই রাষ্ট্রের বিকাশ নির্ভরশীল। তাই ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। মাত্র সাড়ে ৪০০ দৈনিক পত্রিকা ছিল এখন পর্যন্ত সাড়ে ১২০০ দৈনিক পত্রিকা চলছে। সে সময় ১০টি বেসরকারি টেলিভিশন ছিল, এখন বাংলাদেশে ৪০টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে আছে। ৪টি সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আছে। কতগুলি অনলাইন আছে, তা জানা নেই। কারণ পাঁচ হাজার রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেছে’।
এদিন গণমাধ্যমের কর্মীদের প্রশ্নের উত্তরও দেন হাসান মাহমুদ। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি চ্যানেল না দেখানো নিয়ে টেবিল অপারেটরদেরকে দায়ী করেছেন তিনি। তার অভিযোগ, ‘কেবল অপারেটরা বেশি অর্থ দাবি করছেন’।
এদিনের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা এবং পাঞ্জাবি তুলে দেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী রথীন ঘোষের হাতে। এসময় নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় মন্ত্রী হাসান মাহমুদ বাংলাদেশে যাওয়ার আমন্ত্রণও জানান।
সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন সৌগত রায়।
পরে সাইড লাইনে গণমাধ্যমে প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ মন্ত্রী জানান, ‘কলকাতার গুরুত্ব আমাদের কাছে সবসময় ছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতার পত্রপত্রিকা, দূরদর্শন সেসময় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, তা ভোলার নয়। আমি মনে করি আগে থেকে কলকাতা ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সাথে সম্পৃক্ততা আরও বেড়েছে। এবং এই ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাব গঠনের মধ্যে দিয়ে দুই বাংলার সাংবাদিকদের মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়বে’।
অন্যদিকে মোজাম্মেল বাবু জানান, ‘আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মিডিয়ার একটা আমূল পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। সে সময় হতো আলাদা করে প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া বা অনলাইন মিডিয়া বলে কিছু থাকবে না’।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা