৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৪:১২

নির্বাচনের আগে ফের পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা, গুলিতে নিহত দুই

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

নির্বাচনের আগে ফের পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা, গুলিতে নিহত দুই

প্রতীকী ছবি

কোথাও বল ভেবে বোমা দিয়ে খেলতে গিয়ে নাবালকের হাত উড়ছে, আবার কোথাও বোমা-গুলি দিয়েই সরাসরি হামলা চালানোর অভিযোগ, তাতে মৃত্যুও ঘটছে। রাস্তায় ছিটিয়ে পড়ে থাকে গুলির খোসা। আগামী বছরের গোড়ার দিকে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে যেভাবে বোমা, গুলি, রাজনৈতিক সংঘর্ষ, দলীয় কোন্দল আর মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে তাতে তিতিবিরক্ত রাজ্যের মানুষ। শঙ্কায় 'গণতন্ত্র' নামক শব্দটি। 

"বারুদের স্তূপের উপর গোটা বাংলা!"  কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে অন্য মন্ত্রী, দিল্লির বিজেপি নেতারা এমনকি দলের পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ নেতারাও প্রায়শই এই অভিযোগ করে থাকেন। তাদের অভিযোগ একসময় এই বাংলায় রবীন্দ্রসংগীত শোনা যেত, আর এখন বোমার শব্দে ঘুম ভাঙ্গে রাজ্যবাসীর। বুধবার সকালেও জোড়া খুনের ঘটনা শুনে ঘুম ভাঙলো পশ্চিমবঙ্গের মানুষের। 

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বারুইপুরে গুলি করে খুন করা হয়েছে দুজনকে। নিহতদের নাম সাজ্জাদ মণ্ডল ও সারফুদ্দিন লস্কর। মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে বারুইপুর থানার অন্তর্গত নবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের গৌরদা গ্রামে। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বাড়ির অদূরে বসে গল্প করছিল সাজ্জাদ ও সারফুদ্দিন। সেই সময়ই আচমকা বলাই লোকজন নিয়ে এসে তাঁদের উপর চড়াও হয়। খুব কাছ থেকেই তাঁদের দুজনকে গুলি ছোড়ে। রক্তাক্ত অবস্থায় সাজ্জাদ ও সারফুদ্দিন দুজনেই লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলে। গুলি চলার খবর পেয়ে আশপাশের মানুষজন এসে দুজনকেই উদ্ধার করে রাতেই বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে এলে সাজ্জাদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে সারফুদ্দিনকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তাতেই মৃত্যু হয় তার। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে বারুইপুর থানার পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।

প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে বলাই মণ্ডল নামে স্থানীয় এক দুর্বৃত্ত ওই খুনের সাথে জড়িত। এই ঘটনার পরেই উত্তেজিত গ্রামবাসী বলাই মন্ডলের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং অগ্নিসংযোগ ঘটায় বলে অভিযোগ। যদিও খুনের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে এখনও কোনো স্পষ্ট তথ্য সামনে আসেনি। 

এদিকে মঙ্গলবারই রাতের অন্ধকারে ওই জেলারই ভাঙড়ের বড়ালী গ্রামে এক তৃণমূল নেতার বাড়ির লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। জানা গেছে তৃণমূল নেতা ফজলে করিমের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। প্রায় ১২ রাউন্ড মত গুলি চালানোর অভিযোগ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙড় থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী রাতেই ফজলে করিমের বাড়িতে এসে গুলির খোল উদ্ধার করে ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনার পর বুধবার সকালেও এলাকায় তাজা বোমা পাওয়া যায়। 

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে বলে দাবি তৃণমূল নেতার। কয়েকদিন আগেই ভাঙরের তৃণমূল নেতা কাইজার আহমেদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিল এই ফজলে করিম। তাই তার বাড়িতে হামলা হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে। 

মঙ্গলবার রাতে রাজ্যটির হুগলি জেলার আরামবাগে বিকট বিস্ফোরণের শব্দে স্থানীয় তৃণমূল নেতা কাঞ্চন মুন্সির বাড়ির ছাদ উড়ে যায়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় কেঁপে ওঠে আরামবাগ থানার অন্তর্গত বাতানাল গ্রাম পঞ্চায়েতের চাখাজি গ্রাম। অনেক বাসিন্দাদের বাড়ির জানালার কাচ ভেঙে যায়। সম্পূর্ণ বাড়িটিই মাটিতে পড়ে গুড়িয়ে যায়। এ ঘটনায় যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছে গ্রামবাসীরা। 

বর্তমানে কারাগারে বন্দি রয়েছেন কাঞ্চন মুন্সি, আর আরামবাগের মুথাডাঙ্গা এলাকায় অন্য একটি বাড়িতে থাকেন তার পরিবারের সদস্যরা। যদিও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা অস্বীকার করেছে তৃণমূল নেতার স্বজনরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাদের দাবি বাড়িতে বোমা বা বিস্ফোরক রাখা হয়েছে কি না সে বিষয়ে পুলিশের নিরপেক্ষ তদন্ত করা উচিত। যদিও এই বিষয়ে আরামবাগ থানার আইসি বরুন ঘোষ জানান তথাকথিত তৃণমূল নেতা বর্তমানে জেলে রয়েছে এবং তার বাড়িটি পুরনো ছিল সেই কারণে হয়তো হঠাৎ হুরমুড়িয়ে পড়ে গেছে। 

এদিকে বল মনে করে বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে গুরুতর জখম এক নাবালক শিশুসহ দুইজন। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট থানার রামনগর এলাকা। খবর পেয়ে বসিরহাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ রাকিবুল মন্ডল নামে ১১ বছর বয়সী ওই শিশুটি খেলছিল বাড়ির পাশের উঠোনে। সেসময় হঠাৎই একটি বোমা ফেটে জখম হয় শিশুটি, গুরুতর চোট লাগে তার বাম হাতে। ওই বিস্ফোরণে  সোনিয়া বিবি নামে অপর এক মহিলাও আহত হয়।  গুরুতর যখন অবস্থায় ওই শিশু ও গৃহবধূ বসিরহাট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিশুটি কোথা থেকে এই বোমা পেলো তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বসিরহাট থানার পুলিশ। 

অন্যদিকে গত ২ ডিসেম্বর রাতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভূপতিনগরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা সহ তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় এখনো কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। শুক্রবার রাতে তৃণমূল নেতা রাজকুমার মান্নার বাড়িতে ওই বিস্ফোরণের পরদিন শনিবার সকালে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে মেলে রাজকুমার সহ তিনজনের লাশ। ওই বিস্ফোরণের তীব্রতায় উড়ে গিয়েছিল বসত বাড়ির একাংশ। ঘটনার পাঁচদিন পরেও কী থেকে এই বিস্ফোরণ, তা স্পষ্ট করতে পারেনি রাজ্য পুলিশ৷ মঙ্গলবার দুপুরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ফরেনসিক টিম। তারা বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালায়। যদিও ফরেনসিক টিমের দেরিতে আসা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। 

ঘটনার পরই এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই ঘটনার পর এখনও উত্তপ্ত রয়েছে ভূপতিনগর এলাকা। প্রতিদিনই নিয়ম করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিজেপি। 

এদিকে তথ্য প্রমাণ লোপাটের আশঙ্কায় এবং প্রকৃত ঘটনা জানতে এনআইএ (NIA) তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছে জনস্বার্থ মামলা। স্বভাবতই, শেষ পর্যন্ত আদালত এনআইএ (NIA) তদন্তের নির্দেশ দিলে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ক্ষমতাসীন দলের কাছে স্নায়ুর চাপ বাড়বে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর