শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

দুর্লভ প্রজাতির রাজ গোখরা

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

দুর্লভ প্রজাতির রাজ গোখরা

রাজ গোখরা, দুর্লভ প্রজাতির পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিষধর একটি সাপ। এ সাপের নাম রাজ গোখরা হলেও এরা সাধারণ গোখরা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নয়। ইংরেজি নাম কিং কোবরা। কিন্তু ইংরেজি নামের শেষাংশ কোবরা থাকলেও আসলে এরা গোখরা বা কোবরার কোনোটাই নয়। এটি সম্পূর্ণ আলাদা একটি প্রজাতি।

বৈজ্ঞানিক নাম: Ophiophagus hannah.এরা সাপখেকো। অঞ্চল ভেদে এ সাপ শঙ্খচূড় নামেও পরিচিত। এরা চট্টগ্রাম বিভাগে আইরাজ নামে পরিচিত। মূলত দক্ষিণ এশিয়ার বনাঞ্চলজুড়ে এদের বাস। আমাদের দেশে সিলেট, সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের  বনাঞ্চলে এদের দেখা যায়। সম্প্রতি টেকনাফ থেকে এ রাজ গোখরার ছবি তুলেছেন বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ।

তিনি জানান, এ সাপের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৫.৬ থেকে ১৮.৫ ফুট পর্যন্ত হয়। শঙ্খচূড় এলাপিডি পরিবারভুক্ত একটি সাপ। আকৃতি বা ফণার পেছনের অংশ দেখলেই গোখরার সঙ্গে এ সাপের পার্থক্য খুব সহজেই বোঝা যায়।

গোখরার চেয়ে শঙ্খচূড় সাপের আকৃতি অনেক বড়। ফণার পেছনে গোখরার মতো চশমা বা গোক্ষুর আকৃতি চিহ্ন থাকে না। শঙ্খচূড় হচ্ছে সাপখাদক। মূলত এরা সাপ খেয়েই জীবন ধারণ করে। এ ছাড়া ছোট অনান্য প্রাণী খেয়েও এরা খাদ্য চাহিদা মেটায়।

এরা সবচেয়ে বেশি বিষ ঢালতে পারে। এদের বিষ মূলত নিউরোটক্সিক। আক্রান্ত প্রাণীর স্নায়ুুতন্ত্রে আক্রমণ করে। সাধারণ দংশনেই যে কোনো মানুষকে মেরে ফেলতে পারে। এদের কামড়ে মৃত্যু হার প্রায় ৭৫ শতাংশ। একমাত্র রাজ গোখরা সাপই প্রজননের সময় নিজেরা বাসা বানায়। ২০ থেকে ৪০টির মতো ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে নিজে নিজেই বাচ্চা বের হয়ে আসে। এরা ঘন জঙ্গল ও উঁচু ভূমিতে বিশেষ করে হ্রদ ও স্রোতস্বিনী পরিবেশে থাকতে বেশি পছন্দ করে।

বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ জানান, রাজ গোখরা সাপ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ মানুষের বসতবাড়ির আশপাশে এদের দেখা যায় না। এরা গভীর বনাঞ্চলের সাপ। দিনে দিনে প্রকৃতি থেকে এ সাপটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ হলো- বনভূমি কমে যাওয়া, তাদের খাবার কমে যাওয়া। এদের বিষ খুব মূল্যবান হওয়ায় বিশ্বের অনেক মানুষ শৌখিন সাপ হিসেবে এটাকে পালন করে থাকেন। এ ছাড়া আকারে অনেক বড় হওয়ায় এ সাপ দিয়ে খেলা দেখানো হয়। তাই আন্তর্জাতিক চোরাচালানে এ সাপটি প্রথম স্থানে আছে।

সর্বশেষ খবর