সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সরকারকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ক্ষমতা দিয়ে বিল পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষমতা সরকারকে দিয়ে জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সংশোধন আইন, ২০২৩’ শীর্ষক বিল। বর্তমান প্রক্রিয়ায় ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে গণশুনানি করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ট্যারিফ সমন্বয় (মূল্যবৃদ্ধিতে) এবং প্রচলিত আইনে বর্ণিত প্রক্রিয়ায় মূল্য নির্ধারণে সময় বেশি লাগে। দ্রুততম সময়ে ট্যারিফ সমন্বয়ের (মূল্যবৃদ্ধির) লক্ষ্যে সরকারের ক্ষমতা সংরক্ষণের জন্য আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। এদিকে বিলটি জনস্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে এটি পাসের প্রতিবাদে গণফোরামের মোকাব্বির খান সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ২১তম অধিবেশনে গতকালের বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সুপারিশ আকারে বিলটি পাস হয়। বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এর আগে বিলটির ওপর জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। তবে গণফোরামের মুকাব্বির খান বিলটি জনস্বার্থবিরোধী অভিযোগ তুলে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন। তিনি বিলে বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতিবাজ ও মুনাফাখোরদের সুরক্ষা দিতে এবং আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানের জন্য জনস্বার্থবিরোধী এই বিলটি পাসের অভিযোগ তোলেন। একই সঙ্গে এর প্রতিবাদে নিজের উত্থাপিত সংশোধনীগুলো প্রত্যাহার করে নেন। তিনি বলেন, ‘চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনি। বঙ্গবন্ধু প্রায়ই সে কথা বলতেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সুরক্ষা দিতে একবার ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। আজ দুর্নীতিবাজ ও মুনাফাখোরদের সুরক্ষা দিতে ইনডেমনিটিসহ বিলটি আনা হয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির দাম আরও বাড়বে।’ এর আগে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব তুলে মুকাব্বির খান বলেন, ‘বিদ্যুতের কালো আইন তুলে দিয়ে দেখেন দুর্নীতিবাজরা কোথায় পালায়। বিদ্যুতের কালো আইন হলো ওদের কর্মকান্ডকে দেওয়া ইনডেমনিটি। আশা করি তিনি এটা প্রত্যাহার করে নিবেন।’

বিলে বিদ্যমান আইনের ৩৪ ধারার (ক) উপধারা (৩)-এর সংশোধনী এনে বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, কমিশন কর্তৃক প্রবিধানমালা প্রণয়ন না করা পর্যন্ত সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয় করিতে পারিবে।’ এ ছাড়া বিলের ৩৪ক ধারা সংশোধন করে ‘ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয়ে সরকারের ক্ষমতা : সংযোজন করে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে, জনস্বার্থে, কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে উহাদের উৎপাদন বৃদ্ধি, সঞ্চালন, পরিবহন ও বিপণনের নিমিত্ত দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুদকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয় করিতে পারিবে।’

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের ট্যারিফ সমন্বয় করা প্রয়োজন। অর্থনীতির গতিকে চলমান রাখার স্বার্থে নিয়মিত ও দ্রুততম সময়ে ট্যারিফ সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিইআরসির পাশাপাশি সরকারের ক্ষমতা সংক্ষণের জন্য আইনটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিষয়টি জরুরি বিবেচনায়, বর্ণিত বিষয়ে আশু ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে।

সর্বশেষ খবর