বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
জমে উঠেছে ঈদবাজার

টেরিবাজার এখন লোকারণ্য

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

টেরিবাজার এখন লোকারণ্য

ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামের কাপড়ের বৃহৎ পাইকারি বাজার টেরিবাজার জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ভোররাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। বছর পাঁচেক আগেও এই বাজারে মূলত থানকাপড় বিক্রি হলেও কয়েক বছর ধরে তৈরি পোশাকও বিক্রি হচ্ছে। রোজার শুরুতে থানকাপড়ের বিক্রি বেশি হলেও এ মুহূর্তে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক বিক্রি হচ্ছে। এবারের ঈদ মৌসুমে এই বাজারে বিক্রির পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

গতকাল দুপুরে টেরিবাজারের বেশ কিছু শপিং মল, দোকান ঘুরে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। শিশু ও তরুণীদের অনেকে থ্রিপিস, গাউনসহ বিভিন্ন তৈরি পোশাক কিনছেন। পুরুষ ও নারীরা পরিবারের সদ্যদের জন্য পাঞ্জাবি, শাড়ি, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন পণ্য কিনছেন। বাজারের টেইলার্সের দোকানগুলোতেও চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। নগরীর পাহাড়তলী এলাকার গৃহবধূ নাজনীন মুন্নি জানান, পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় থানকাপড় কিনতে তিনি বাজারে এসেছেন। পছন্দসই একটি শাড়ি পেয়ে নিজের জন্য সেটি কিনে নিয়েছেন। রোজার শুরুতে তিনি কিছু কেনাকাটা করেছেন। এখন বাকিটুকু সারছেন।

হালিশহর এলাকার বাসিন্দা পারভেজ হাসান জানান, তিনি নিজের ও বাবার জন্য পাঞ্জাবি, স্ত্রীর জন্য শাড়ি কিনেছেন। প্রচ- ভিড় থাকলেও বৈচিত্র্যের কারণে তিনি প্রতিবারই এখানে কেনাকাটা করতে আসেন।

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল হক জানান, ঐতিহ্যবাহী এই বাজারে ১২০টির মতো ছোট-বড় মার্কেটে ৩ হাজারের মতো দোকান আছে। এর মধ্যে অনেক ওয়ানস্টপ শোরুম আছে, যেগুলোতে জামা-জুতো থেকে শুরু করে ঈদের সব সামগ্রী একসঙ্গে পাওয়া যায়। গত কয়েক বছরের হিসাবে, এবারের ঈদে পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে টেরিবাজারে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি পণ্য বিক্রি হবে বলে প্রত্যাশা তার। নগরীর অন্য মার্কেটগুলোর তুলনায় এখানে দামও তুলনামূলক কম বলে দাবি আমিনুলের। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এই বাজারের বেশির ভাগ পণ্যই আমদানি করা। ভারতীয় ও পাকিস্তানি শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, গাউনসহ নানা গার্মেন্টসামগ্রী আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দুবাই, চীন, ভিয়েতনাম থেকে কসমেটিক, জুয়েলারি, জুতাসহ আনুষঙ্গিক পণ্য আমদানি করেছেন তারা। মনে রেখো, মেগামার্ট, রাজস্থান, বৈঠকবাজার, পরশমণিসহ বেশ কয়েকটি ওয়ানস্টপ শপে একই ছাদের নিচে অথবা একই ভবনের কয়েকটি ফ্লোরে মিলছে শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবিসহ সব ধরনের পোশাক, অলংকার, প্রসাধনী, জুতাসহ অন্যান্য পণ্য। এ বাজারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, কিশোরী ও তরুণীদের পোশাকের ক্ষেত্রে প্রতি বছর কোনো না কোনো পোশাক ট্রেন্ডিং পণ্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এখানে। ওই পণ্যটি বিক্রির শীর্ষে থাকে। এবারও গুল আহমেদ, সাদা বাহার, বিন সাইদসহ বেশ কিছু নামের পোশাক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা। বেচাকেনার পরিমাণ সন্তোষজনক উল্লেখ করে একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রহিম উদ্দিন বলেন, ‘বিক্রি ভালো। তবে ক্রেতারা দাম নিয়ে বেশি দরকষাকষি করেন। আমরা চাই পণ্যটি বিক্রি হয়ে যাক। কারণ এখন বিক্রি করতে না পারলে অবিক্রীত থেকে যাবে। তাতে আমাদের বিনিয়োগ উঠে আসবে না।’ এদিকে ঈদ ঘিরে এই বাজারের পাঁচ শতাধিক দর্জির দোকানের কর্মীরা দিনরাত কাজ করছেন। আলপনা টেইলার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শাহেদ বিন নেওয়াজ জানান, তারা এখন কোনো অর্ডার নিচ্ছেন না। গ্রাহকদের কাছ থেকে আগে যেসব অর্ডার নিয়েছেন সেগুলো কাজ শেষে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর