লন্ডনের হামস্টেড হিথে শীতের এক রাতে হঠাৎ করে নাথান ডান ও তার প্রেমিকা সাঁতার কাটতে নামলেন। রাতের তীব্র ঠান্ডা উপেক্ষা করে ভালোবাসার প্রথম দিককার আবেগে তারা পানি ছুঁয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন। পানি ঠান্ডা ছিল, কিন্তু মনের উত্তাপ ছিল প্রবল।
সাঁতারের পর প্রেমিকার এক চুমুতে যেন বদলে গেল নাথানের পুরো জীবন। তিনি বলেন, ‘এটা যেন হঠাৎ আঘাতের মতো ছিল, সবকিছু এক মুহূর্তে পাল্টে গেল।’
সেই রাতের পর থেকে নাথান অনুভব করতে থাকলেন, যেন তিনি নিজের শরীরের বাইরের একজন মানুষ—নিজেকেই বাইরে থেকে দেখছেন। তার চোখ ঝাপসা হয়ে গেল, কণ্ঠস্বর হয়ে উঠল যান্ত্রিক। যেকোনো ধরনের পানি—বৃষ্টির ফোঁটা হোক কিংবা গরম পানির স্নান—তাকে আতঙ্কিত করে তুলত। এতটাই ভীত হয়ে পড়েছিলেন যে পরদিন নিজেই নিজেকে আঘাত করেন।
এরপর শুরু হয় এক দীর্ঘ সংগ্রাম। চিকিৎসকরা অনেক পরীক্ষা করেও রোগ ধরতে পারেননি। অবশেষে সাড়ে তিন বছর পর তিনি জানতে পারেন, তিনি ডিপারসোনালাইজেশন ডিসঅর্ডারে (Depersonalisation Disorder) ভুগছেন। এটি এমন একটি মানসিক অবস্থা যেখানে ব্যক্তি নিজেকেই চিনতে পারেন না বা বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন। যুক্তরাজ্যে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হলেও, তখন এর নাম খুব কম মানুষই জানত।
নাথান এই অবস্থাকে বোঝাতে বলেন, ‘আমি নিজের মাথার ওপর থেকে নিজেকে দেখতাম—নিজের শরীরকে ঘোলা পানিতে ডুবে থাকা একটা কালো বাক্সের ভেতর থেকে।’ তিনি অনেক চিকিৎসা গ্রহণ করেন, এমনকি একসময় এক মহিলার সাহচর্যে আবার স্নান করার সাহস পান, যা ছিল তার ভয়কে জয় করার বড় পদক্ষেপ।
২০১১ সালে তিনি সিডনিতে মা–বাবার কাছে ফিরে যান এবং এক বিশেষজ্ঞের কাছে যান, যিনি অবশেষে রোগ নির্ণয় করেন। তাকে ধাপে ধাপে পানি ও ভেজা তোয়ালে দিয়ে এক্সপোজার থেরাপি করানো হয়। পাশাপাশি একধরনের ব্রেইন স্টিমুলেশন চিকিৎসাও নেন তিনি। ছয় মাসের মাথায় তিনি বলেন, ‘আমি আবার নিজেকে ফিরে পাচ্ছি।’
বর্তমানে নাথান একজন লেখক ও পিতা। যদিও এখনো মাঝে মাঝে পুরনো উপসর্গ ফিরে আসে, তবুও তিনি জানেন, কীভাবে তা সামলাতে হয়। নিজের রোগ ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তিনি লিখেছেন When Nothing Feels Real নামের বই, যেখানে তুলে ধরেছেন একজন ভেতর থেকে ছিন্ন মানুষ কিভাবে ধীরে ধীরে আবার জীবনের মূল স্রোতে ফিরতে পারেন।
নাথান বলেন, সবচেয়ে কার্যকর শব্দটি ছিল ‘সারেন্ডার’। মাঝে মাঝে এই ভয়াবহ অবস্থাকে স্বীকার করে নিতেই হয়—ভেসে থাকতে হয়।
আজ, স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে একটি শান্ত জীবনের আশায় তিনি সামনে এগোচ্ছেন। ‘আমার মেয়ের বয়স মাত্র এক সপ্তাহ। আমি আশা করি, আমি তার জন্য সবটা দিতে পারব,” বলেন নাথান। স্ত্রীকে নিয়ে তার সবচেয়ে বড় ভরসার বাক্য, ‘আমরা বলি—আমাদের মধ্যে সবসময় একটা ‘মূল আমি’ রয়ে গেছে। এটা আমাদের ভালোবাসার স্মৃতি এবং তা ধরে রাখার চেষ্টার প্রতীক।’ সূত্র : গার্ডিয়ান
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল