পেরুর লা লিবেরতাদ অঞ্চলের হুয়াকা ইয়োলান্দা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে গবেষকরা প্রায় ৪ হাজার বছর আগের একটি রঙিন ত্রি-মাত্রিক (থ্রি-ডি) দেয়ালচিত্র আবিষ্কার করেছেন। এই আবিষ্কারকে আমেরিকার প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে বোঝাপড়ায় এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন বলে মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
তিন মিটার উচ্চতা ও ছয় মিটার প্রস্থের এই দেয়ালচিত্রে প্রসারিত ডানাওয়ালা একটি বৃহৎ শিকারি পাখি দেখা গেছে। এর মাথায় রয়েছে হীরার মতো নকশা, যা দেয়ালের দুই দিকের নকশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। দেয়ালচিত্রে নীল, হলুদ, লাল ও কালো রঙ ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক দলের প্রধান আনা সিসিলিয়া মউরিসিও জানান, এটি ছিল একটি মন্দিরের অঙ্গন সজ্জার অংশ। দেয়ালে মাছ, মাছ ধরার জাল, নক্ষত্র এবং পৌরাণিক চরিত্রের নকশাও রয়েছে। এগুলো প্রাচীন উপকূলীয় সমাজের বিশ্বাস, সামাজিক কাঠামো এবং প্রকৃতির সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে স্পষ্ট করে।
তিনি বলেন, এই সমাজ কৃষি ও সমুদ্রকেন্দ্রিক জীবনে অভ্যস্ত ছিল। তখনই তারা সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস গড়ে তুলতে শুরু করে। সমাজের প্রভাবশালী মানুষরা ছিলেন শামান (ধর্মীয় নেতা) বা পুরোহিত, যারা ভেষজ ওষুধ, নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ এবং আবহাওয়া পূর্বাভাস দেওয়ার জ্ঞান রাখতেন। তারা একদিকে ছিলেন আধ্যাত্মিক নেতা, অন্যদিকে ছিলেন জ্ঞানের ধারক, অনেকটা প্রাচীনকালের বিজ্ঞানীর মতো।
দেয়ালের এক অংশে তিনটি মানবাকৃতির চিত্র রয়েছে, যা মানুষের পাখিতে রূপান্তরের প্রতীক বলে মনে করছেন গবেষকরা। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ছিল একধরনের ধর্মীয় আচার বা ধর্মীয় রীতি) যেখানে শামানরা সান পেদ্রো ক্যাকটাসের মতো মাদকজাত উদ্ভিদ সেবনের পর এক বিশেষ মানসিক অবস্থায় প্রবেশ করতেন।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করছেন, হুয়াকা ইয়োলান্দার এই মন্দির চাভিন দে হুয়ানতার নামক প্রাচীন ধর্মীয় কেন্দ্রেরও আগের সময়ের। অর্থাৎ, এটি পেরুর প্রাচীন সভ্যতার বিকাশকালকে বোঝার ক্ষেত্রে এক বিরল নিদর্শন।
তবে গবেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, কৃষি সম্প্রসারণ, শহরায়ণ ও লুটপাটের কারণে এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। এখনো এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ সুরক্ষা পায়নি।
মউরিসিওর মতে, প্রাচীন এই সমাজ প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে বেঁচে ছিল। তারা এমন সময়েও টিকে থাকতে পেরেছিল যখন এল নিনো আবহাওয়া ঘটনাজনিত ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস হতো। তিনি বলেন, তাদের এই অভিজ্ঞতা বর্তমান সময়ের জলবায়ু সমস্যার মোকাবিলায় মূল্যবান শিক্ষা দিতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল