অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আগামী বুধবার থেকে সাঁড়াশি অভিযানে নামছে যৌথ বাহিনী। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে ৫ হাজার জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে সরকারের একটি সংস্থা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলীয় বিবেচনায় এই তালিকা প্রণয়ন করা হয়নি। অপরাধ বিবেচনা করেই তালিকা প্রস্তুত হয়েছে।
অন্যদিকে, অভিযানের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুত রাখা হয়েছে দেশের ৬৭টি কারাগার। তবে শেরপুর জেলা কারাগারটি গতকাল পর্যন্ত উপযোগী না হওয়ায় ওই জেলার হাজতি-কয়েদিদের জন্য ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় এবং জামালপুর জেলা কারাগার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গতকাল বিশেষ অভিযানের বিষয়ে কথা হয় পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে এ অভিযান চলবে। তবে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক-৪ শাখার উপসচিব মো. আরিফ উজ জামান স্বাক্ষরিত একটি আদেশে বলা হয়েছে- জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা অভিযানের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। আজ থেকে পুলিশ সুপার, সশস্ত্র
বাহিনীর প্রতিনিধি এবং গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য সদস্যদের সমন্বয়ে কোর কমিটির সভা করবেন। সভায় তারা স্থগিতকৃত লাইসেন্সের তালিকা পর্যালোচনা করবেন। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর থেকে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব, আনসার সমন্বয়ে যৌথ অপারেশন টিম গঠন করে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। চিঠিটির আরেকটি অংশে বলা হয়েছে, মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনাররা সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় আগামী ৪ সেপ্টেম্বর থেকে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য যৌথ অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রণীত স্থগিতকৃত লাইসেন্সধারীদের তালিকা এবং নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত জমাকৃত অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের তালিকা ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরবরাহ করবেন। এরই মধ্যে এই চিঠি পুলিশ মহাপরিদর্শক, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, বিভাগীয় কমিশনার, সব জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা পুলিশ সুপারসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, রাষ্ট্র এবং সমাজের জন্য হুমকি- তালিকায় এমন ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে। তাদের দলীয় সম্পৃক্ততার বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি। গত ১৫ বছরে সাধারণ মানুষকে নির্যাতন, হয়রানি, দখল বাণিজ্য, অনিয়ম এবং সিন্ডিকেট করে রাষ্ট্রীয় অর্থ তছরুপ করে সমাজকে অস্থিতিশীল করা, কিশোর গ্যাং এবং তাদের পৃষ্টপোষকদের আইনের আওতায় আনতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর লুটপাট, চাঁদাবাজি এবং দখল বাণিজ্যে সক্রিয় হওয়া ব্যক্তিদেরও এই তালিকায় নেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় কারাগারসহ ৬৭টি কারাগার। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে নরসিংদী এবং শেরপুর কারাগারে হামলার ঘটনায় বেশ কিছুদিন ওই দুটি কারাগারের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে এরই মধ্যে নরসিংদী কারাগার চালু হয়েছে। তবে শেরপুর কারাগারের বন্দিদের ক্যাটাগরি অনুসারে ময়মনসিংহ এবং জামালপুরে রাখছে কারা কর্তৃপক্ষ। বিশেষ অভিযোগ গ্রেপ্তার বন্দিদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম অনুসরণ করবে কারা কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে দুর্ধর্ষ এবং ভয়ংকর বন্দিদের ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে কারা সূত্র নিশ্চিত করেছে। কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান বলেন, বিশেষ অভিযানের বিষয়টি আমরা এরই মধ্যে অবগত হয়েছি। কেবলমাত্র শেরপুর কারাগার বাদে বাকিসব কারগারগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত দুই মাসে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আমাদের কিছু কারাগারে হামলার ঘটনায় অনেকগুলো গাড়ি এবং স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে। সরকারের কাছে আমরা এজন্য বরাদ্দ চেয়েছি। তবে আগামী ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে শেরপুর কারাগারও বন্দি ব্যবস্থাপনার জন্য উপযোগী করতে পারব বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলার ঘটনায় অস্ত্রাগার থেকে ৮৫টি অস্ত্র লুট হয়েছে। তবে এর মধ্যে ৫৩টি উদ্ধার হয়েছে। শেরপুর কারাগার থেকে ৮টি অস্ত্র খোয়া যায়। তবে এরই মধ্যে সাতটি উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। এখনো একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এর বাইরে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন এবং শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বিভিন্ন থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। এতে থানাসহ বিভিন্ন ইউনিট এবং ডিউটিস্থল থেকে অস্ত্র লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয় বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ। লুট হওয়া সেসব অস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে অনুরোধ জানিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় পুলিশ সদর দপ্তর। তবে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের সংখ্যা খুবই নগণ্য। এতে করে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে লুট হওয়া অস্ত্র নিয়ে এরই মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই। ওই দিনই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে বেসামরিক ব্যক্তিদের দেওয়া সব অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।