বছরের শুরু থেকেই গার্মেন্টসে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা লেগেই আছে। শ্রমিক অসন্তোষ বন্ধে মালিকদের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ মালিক, শ্রমিক ও সরকার মিলে তৈরি পোশাকশিল্প শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট আরও ৪ শতাংশ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলতি মাসের (ডিসেম্বর) বেতনের সঙ্গে ৯ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পাবেন তারা। এরপরও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান এই খাতে শ্রমিক অসন্তোষ যেন থামছেই না। সরকারঘোষিত বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ৯ শতাংশ প্রত্যাখ্যান করে তা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শ্রমিকরা। বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, চলমান আন্দোলনের জেরে আশুলিয়ায় সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মোট ২৯টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
গার্মেন্টসের অস্থিরতা নিয়ে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শিল্প খাতে একধরনের অস্থিরতা চলছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে এই অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। পতিত সরকার ও তাদের বন্ধুরাষ্ট্র জড়িত হয়ে কিছু সমস্যা তৈরি করছে। কিছু সমস্যা শ্রমিকেরা না বুঝে করছেন। তিনি বলেন, শ্রমিকেরা সমস্যা তৈরি করছেন না। তাঁদের দিয়ে সমস্যা তৈরি করানো হচ্ছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক। যারা দেশের বাইরে থেকে অস্থিরতা তৈরির ইন্ধন দিচ্ছে, তাদের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। শ্রমিকরা মনে করেন, তাদের মজুরি বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে মেলে না। কর্মপরিবেশও তাদের কাছে যথেষ্ট নিরাপদ নয়। অন্যদিকে, মালিকপক্ষ দাবি করেন, তারা শ্রমিকদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে চলেছেন এবং বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আরও বেশি মজুরি বাড়ানো সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গার্মেন্টস শিল্পের এই সংকট দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এটি একদিনে সমাধান করা সম্ভব নয়। সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে একসঙ্গে বসে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পক্ষ থেকে জানানো হয়, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গত বৃহস্পতিবার আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ১৩ (১) ধারা মতে ৮টি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। কারখানাগুলো হলো আশুলিয়ার এজে সুপার গার্মেন্টস লিমিটেড, মাম গার্মেন্টস লিমিটেড, ফিরোজা গার্মেন্টস লিমিটেড, নাসা সুপার গার্মেন্টস লিমিটেড, নাসা বেসিক লিমিটেড, টাউজার লাইন লিমিটেড, আল মুসলিম অ্যাপারেলস ও এস সুহি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। বিজিএমই এর পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ৮টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি আরও ৮টি কারখানা সর্বশেষ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ১৩টি কারখানার শ্রমিকেরা কর্মস্থলে উপস্থিত হলেও কাজ না করে বসেছিলেন। এ কারণে ওই সব কারখানায় আজ উৎপাদন বন্ধ ছিল।