কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় ২০২৩ সালে ১ হাজার ৪৩২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) জানায়, চলতি বছর প্রথম দুই মাসে ২১৩ শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ২১৩ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময়ে আহত হন ১৭০ শ্রমিক। গতকাল জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)। সংগঠনটির জরিপ বলছে, খাত অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ১৮২ জন শ্রমিক নিহত হন পরিবহন খাতে। এ ছাড়া নির্মাণ খাতে সাতজন ও পোশাক খাতে তিনজন এবং অন্যান্য খাতে ২১ জন শ্রমিক নিহত হন। একই সময়ে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ৭০ জন পরিবহনশ্রমিক, ১৮ নির্মাণশ্রমিক এবং ১২ জন পোশাকশ্রমিক। অন্যান্য খাতে ৭০ জন শ্রমিক আহত হন। গত বছর কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭৩৬ জন শ্রমিক নিহত হন। খাত অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ২৯২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় পরিবহন খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় কৃষি খাতে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় নির্মাণ খাতে। অপরদিকে কর্মক্ষেত্রে আহত হন ৩০০ জন শ্রমিক। সর্বোচ্চ আহত হন ৪৭ জন মৎস্য খাতে।
এদিকে, সারাবিশ্বে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বা রোগে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে একজন শ্রমিক মারা যান। শ্রমিকদের এমন মৃত্যুর কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে অর্থনীতি। বছরে বৈশ্বিক জিডিপি হারাতে হচ্ছে ৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি কনফারেন্সে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধান এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সহযোগিতায় এ কনফারেন্স আয়োজন করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। এতে সভাপতিত্ব করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ওমর মো. ইমরুল মহসিন।
অনুষ্ঠানে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রবন্ধে আইএলওর ২০১৯ সালের তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্বজুড়ে বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বা রোগে ২৭ লাখ ৮০ হাজার শ্রমিকদের মৃত্যু হয়। যেখানে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে মারা যান একজন শ্রমিক। বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় আহত হন ৩৭ কোটি ৪০ লাখ শ্রমিক। এতে বৈশ্বিক জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪ শতাংশ।
বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরে তিনি জানান, ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে এক হাজার ৪৩২ জন শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন ৫০২ জন। অনানুষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক হাজার ১০৩ জনের। সবচেয়ে বেশি ৬৩৭ জন মারা যান পরিবহন খাতে। এছাড়া নির্মাণ খাতে ১৪৯ জন এবং দৈনিক মজুরিভিত্তিক খাতে ২২০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।