সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে বিএসএফ কর্তৃক জোরপূর্বক পুশইন করা ৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ বাংলাদেশিকে গতকাল নিজ নিজ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। এদের সবাই মুসলিম। জন্মসূত্রে অন্য তিন ভারতীয় মুসলিম নাগরিককে বিনা পাসপোর্টে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের দায়ে (১৯৫২ সালের দ্য কন্ট্রোল অব অ্যান্ট্রি অ্যাক্ট) সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল শ্যামনগর থানায় প্রেস ব্রিফিং শেষে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ব্রিফিংয়ে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান জানান, ৯ মে ভোররাতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনের সমুদ্রসংলগ্ন মান্দারবাড়িয়া চরে ৭৫ বাংলাদেশি এবং তিন ভারতীয় মুসলিমকে জোরপূর্বক পুশইন করেন। মান্দারবাড়িয়া ফরেস্ট অফিস কর্তৃক অবহিত হয়ে ১০ মে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন অতিদ্রুত পুশইন হওয়া ৭৮ ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। তাদের প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধসামগ্রী সরবরাহ করে সুস্থ করে তোলা হয়। পরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১১ মে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়। এর আগে সকালে কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ জানান, এদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন যাবৎ ভারতের গুজরাট রাজ্যে বসবাস করে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, ২৬ এপ্রিল গভীর রাতে ভারতীয় পুলিশ তাদের বস্তিগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। তাদের ও পরিবারের সদস্যদের অমানবিক নির্যাতন করে। তারপর তাদের চোখ বেঁধে একটি সামরিক বিমানে ও পরিবারের অন্য সদস্যদের অন্য একটি সামরিক বিমানযোগে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করা হয়।
পরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জাহাজের মাধ্যমে ৯ মে ভোররাতে গোপনে বাংলাদেশের সুন্দরবনের সমুদ্রসংলগ্ন মান্দারবাড়িয়া চরে রেখে যান। জাহাজে অবস্থাকালে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ না করে তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন, অমানবিক আচরণ, ধর্মীয় অবমাননাসূচক মন্তব্য করা হয়। তারা জানান, এখন পর্যন্ত আটক তাদের স্ত্রী-সন্তানদের সঠিক অবস্থানও তারা জানেন না।
শ্যামনগর থানায় প্রেস ব্রিফিং ও স্বজনদের কাছে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির মোল্লসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।