স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেষজ উপাদানের গুণের কোন শেষ নেই। তেমনই একটি উপাদান হলো জিরা। এই জিরা দিয়ে তৈরি পানীয় শরীরের জন্য একটি জাদুকরী টনিক। স্বাদে ও পুষ্টিতে ভরপুর এই পানীয় ভারতে গ্রীষ্মকালে খুবই জনপ্রিয় এবং আমাদের দেশেও বেশ পরিচিত।
জিরা পানি পানের ফলে এটি দেহকে ঠাণ্ডা করতে এবং দেহে উৎপন্ন অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমিয়ে দেহ সতেজ করে। এটি স্বাস্থ্য সম্মতভাবে পেটের দূষিত পদার্থ কমাতে সহায়তা করে। তাই নিচে জিরা পানির স্বাস্থ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
১) ওজন কমানো
এর একটি উপকারিতা হচ্ছে ওজন কমাতে সাহায্য করে। দিনে দু’বার এই জিরাপানি খেলে এটি পেটের ক্ষুধা কমিয়ে দেয়। ফলে খাওয়ার ইচ্ছেটা কমে যায়।
২) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
জিরা আয়রনের চমৎকার একটি উৎস। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কাজ পরিচালনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে আয়রনের পাশাপাশি বেশ ভালো পরিমান ভিটামিন এ ও সি থাকে। যা থেকে অ্যান্টি অক্সিডেণ্টের সুবিধা পাওয়া যায়।
৩) রক্তশূন্যতার চিকিৎসা
জিরাতে থাকা আয়রন রক্তস্রোতে অক্সিজেন বহনকারী হিমোগ্লোবিনের পরিমান বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া এটি আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতার জন্য বেশ উপকারী।
৪) অ্যাসিডিটি কমায়
এটি অ্যাসিডিটি সমস্যার জন্য ভালো। যেকোনো ভারী খাবার খাওয়ার পর ধীরে ধীরে জিরাপানি খেয়ে নিলে অ্যাসিডিটির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৫) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
জিরাপানি পানের আরেকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তারা দিনে দুইবার এই পানীয়টি পান করতে পারেন।
৬) গ্যাসের সমস্যা দূরীকরণ
পেটের গ্যাস কমাতে জিরাপানি সাহায্য করে। যদি গ্যাসের কারনে পেট ফুলে থাকে তাহলে ধীরে ধীরে জিরাপানি খেতে পারেন যতক্ষন না পেটের গ্যাস দূর হয়।
৭) বমি বমিভাব দূর
জিরাপানি বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে। তাই গর্ভবতী নারীরা ‘মর্নিং সিকনেস’ থেকে মুক্তি পেতে এটি পান করতে পারেন।
৮) পানিশূন্যতা দূরীকরণ
এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতার মাঝে একটি হচ্ছে গ্রীষ্মকালে এটি দেহকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিকভাবে দেহের তাপমাত্রা কমায়।
৯) ভালো ঘুমের জন্য
যাদের মাঝে ইনসোমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা আছে তাদের জন্য জিরাপানি খুবই উপকারী। নিয়মিত খেলে ভালো ঘুম হয়।
১০) স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
জিরা মস্তিস্কের শক্তিকে উন্নত করে। তাই অল্প বয়স থেকেই যদি জিরাপানি খাওয়া যায় তাহলে তা উল্লেখযোগ্যভাবে স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে তীক্ষ্ণ করে।
১১) শরীরের দূষণ দূরীকরণ
জিরাপানি যকৃতের ও পাকস্থলীর জন্য খুবই উপকারী। জিরার মাঝে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট দেহের এবং ভেতরের অঙ্গের বিষাক্ত উপাদান দূর করে।
১২) গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের বাড়তি পুষ্টি
জিরাতে থাকা আয়রন গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের জন্য খুবই ভালো। এটা গর্ভস্থ ভ্রুণের, বাচ্চার এবং মায়ের আয়রনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।
১৩) তলপেটের ব্যথা কমায়
মাসের বিশেষ দিনগুলোতে তলপেটে ব্যাথা অনুভব করেন অনেক নারী। তাদের এই ব্যথা কমাতে অল্প অল্প করে সারাদিন জিরাপানি খেতে পারেন।
১৪) ত্বকের জন্য
যখন দেহ আভ্যন্তরীণভাবে স্বাস্থ্যবান থাকে তা ত্বকের মাঝে প্রতিফলিত হয়। এই জিরা পানি দেহকে আভ্যন্তরীণভাবে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান করে। হজমক্রিয়াকে বাড়িয়ে দেয় বলে ত্বককে স্বাস্থ্যবান ও পুষ্ট থাকতে সাহায্য করে। এ ছাড়া জিরাপানি ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
১৫) অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সরবরাহ
নিয়মিত জিরা পানি পানে দেহ পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন এ, সি ও ই পায়। যেগুলো এন্টিঅক্সিডেন্ট ও এন্টিএজিং গুনাগুনের জন্য পরিচিত। এর ফলে ত্বক পরিপূর্ণ হয় এবং অকালে বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
১৬) ব্রণের চিকিৎসা
জিরা পানি ব্রণের জন্য প্রাকৃতিক ঔষধের কাজ করে।
কীভাবে বানাবেন জিরাপানি?
পানি- ১ লিটার
জিরা- দেড় চা চামচ
চুলায় একটি হাঁড়িতে পানি ফুটিয়ে জিরা দিয়ে আরো ৮ থেকে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। পৌনে ১ লিটার পানি হলে নামিয়ে ছেঁকে ঠাণ্ডা করতে হবে। এটি চাইলে কুসুম গরম বা বরফ শীতল দুভাবেই খাওয়া যায়। আরো সুস্বাদু করার জন্য এর সঙ্গে সামান্য চিনি, বিট লবন, গোলমরিচ গুঁড়ো, লেবুর রস, ধনেপাতা/পুদিনাপাতা কুচি ও চাইলে কাঁচা আম যোগ করে ব্লেন্ড করে নেওয়া যায়।
বিডি-প্রতিদিন/ ১০মে, ২০১৫/ রোকেয়া।