কাঁকড়ার খোল যে শুধুমাত্র খাদ্য শিল্পের আবর্জনা নয়, সেই ধারণা ভেঙে দিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী দল। সম্প্রতি তাদের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, কাঁকড়া বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম।
রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রির Journal of Materials Chemistry A-তে প্রকাশিত হয়েছে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের এই গবেষণাপত্রটি। এই গবেষক দলে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক পার্থপ্রতিম রায়, অধ্যাপক সুখেন দাস, রিসার্ট স্কলার নুর আমিন হকসহ মোট আট জন।
এই গবেষণাপত্র অনুযায়ী, কাঁকড়ার খোল থেকে সংগৃহীত করা হয় এক ধরনের উপাদান। যার নাম ‘Chitin Nanofiber’ (সিএনএফ)। কাঁকড়ার খোল থেকে একটি বিশেষ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রোটিন এবং মিনারেল বাদ দিয়ে এই সিএনএফ সংগ্রহ করা হয়। সিএনএফ-এর উপর নির্ভর করে তৈরি করা সম্ভব পিজোইলেকট্রিক ন্যানোজেনারেটর (পিইএনজি), যা হাঁটাচলা, কথা বলা, নাড়ির স্পন্দন, গাড়ির চলন এবং আঙুল চালনার মতো সাধারণ কাজের মধ্যে দিয়েই বৈদ্যুতিন শক্তি তৈরি করতে পারে।
বর্তমান সময়ে যে পিইএনজি যন্ত্রগুলি রয়েছে তা পরিবেশ বান্ধব নয়। তৈরি করতেও খরচ বিশাল। তাই পেসমেকারের মত স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত যন্ত্রে এই ধরনের পিইএনজি ব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। কিন্তু, গবেষকদের দাবি, কাঁকড়ার খোল থেকে সংগৃহীত উপাদান সিএনএফ পরিবেশ বান্ধব, অ-বিষাক্ত, পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়। এটি পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, শক্তিশালী, নতুন করে ব্যবহারযোগ্য ও টেকসইও বটে। তাই এই উপাদান ব্যবহার করে তৈরি পিইএনজি যন্ত্র নিঃসন্দেহে পেসমেকার অথবা অন্যান্য ধরনের হেলথ কেয়ার ইউনিটেও বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। গবেষণার ফল অনুযায়ী, হৃদস্পন্দনের সামান্য চাপেও এই পিইএনজি কাজ করতে পারে।
কিছুদিন আগেই কাঁকড়ার খোলের সঙ্গে গাছের কিছু উপাদান মিশিয়ে প্লাস্টিকের মতো একটি উপাদান তৈরি করেছেন জর্জিয়া টেকের বিজ্ঞানীরা। অধ্যাপক এবং গবেষক কারসন মেরিডিয়েথ জানান, এই নতুন উপাদানটি প্লাস্টিকের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, 'তাজা খাদ্য, সংরক্ষিত খাদ্য, এমনকী মাংস, সবজি, ফলের মতো জিনিসকেও এই উপাদান দিয়ে মোড়া যেতে পারে।' এটিও কাঁকড়ার খোল থেকে সংগৃহীত chitin উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই সংগৃহীত উপাদানের সঙ্গে গাছ থেকে পাওয়া একটি উপাদান সেলুলোজ দিয়ে মিশিয়ে প্লাস্টিকের মতো একটি উপাদান তৈরি করেছেন কারসন মেরিডিয়েথ।
আবর্জনা আখ্যা দিয়ে প্রতিদিন বিশাল পরিমাণ কাঁকড়ার খোল ফেলে দেওয়া হয়। সেই আবর্জনাকেই ব্যবহার করে এই আবিষ্কার নিত্যদিনের জীবনে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হলে পরিবেশ রক্ষায় অনেকটাই সাহায্য করবে বলে মত গবেষকদের। চলতে ফিরতে মোবাইল চার্জ হোক, কে না চান? উত্তরে বলা যেতেই পারে, তার জন্য পাওয়ার ব্যাংক নামক যন্ত্রটি তো রয়েছে। কিন্তু, পাওয়ার ব্যাংক তো পরিবেশ বান্ধব নয়। তাই পরিবেশের কথা চিন্তা করে চলাফেরার সময় অনায়াসে মোবাইল চার্জের বিকল্প উপায় তৈরি করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিষ্কৃত এই যন্ত্রটি। সূত্র : কলকাতা২৪x৭
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন