তামাশার নির্বাচনকে কার্যত রুখে দিয়েছে জনগণ। এর মাধ্যমে দেশবাসী একটি লক্ষ্য অর্জন করলো মাত্র। এটি চূড়ান্ত সাফল্য নয়, বরং চলমান স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রক্রিয়ারই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ- এমনটাই দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় সময় রবিবার রাতে লন্ডনের ডকল্যান্ডের একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদশের ভয়ানক এ দুর্যোগের সময়ে বর্তমানে যেন ন্যায়ের সঙ্গে অন্যায়ের, সত্যের সঙ্গে মিথ্যার এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ক্ষমতার মোহের লড়াই চলছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রহসনের নির্বাচনকে প্রতিরোধ, প্রতিহত ও বর্জন করায় গণতন্ত্রকামী সমগ্র দেশবাসী ও ১৮ দলীয় ঐক্যজোটের তৃণমূলসহ সব স্তরের নেতাকর্মীকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।
তিনি বলেন, সাধারণ জনগণ ঘরে-বাইরে সর্বত্র তাদের অধিকার হরণের এ নির্বাচনের বিরুদ্ধে যে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন তা একাধারে রাজপথে থাকা আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের জন্য যেমন অনুপ্রেরণাদায়ক, তেমন দেশের গণতন্ত্রকে সমুন্নত রেখে মুক্ত আদর্শ ও চিন্তা প্রকাশের সহায়ক। ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য আমাদের এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সাফল্য ইনশাল্লাহ অনিবার্য।
তারেক বলেন, আমাদের সবার মূল লক্ষ্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করে গণতন্ত্রকামী মানুষের চেতনার প্রতিফলন ঘটানো। সেই অভীষ্ঠ গন্তব্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত সর্বাত্মক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আমাদের মাঝে অনেকেই দিনের পর দিন ধরে সংগ্রাম করছেন রাজপথে। আর তাদের সঙ্গে রয়েছে সব শ্রেণী ও পেশার আরো কোটি-কোটি মানুষ সমর্থন, প্রেরণা, উচ্ছ্বাস ও দোয়া। আমি বিশেষভাবে বলতে চাই, সরকারের বাকস্বাধীনতা হরণের সব অপচেষ্টার মাঝেও অনেক গণমাধ্যম যেভাবে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে দায়বদ্ধতা অব্যাহত রাখছে, তাতে মুক্তিকামী বাংলাদেশীরা আজ অনুপ্রাণিত।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের এ আন্দোলনে ইতিমধ্যে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ৫ জানুয়ারির প্রত্যাখ্যাত নির্বাচনের দিন সরকারের নির্বিচার গুলিতে নিহত হয়েছেন ২০ জনেরও বেশি সাহসী সেনানী, আহত হয়েছেন অসংখ্য। নির্মম নির্যাতন ও জেল-জুলুমের স্বীকার হচ্ছেন অগুনিত মানুষ।
তারেক রহমান আরও বলেন, প্রবাসে চলমান চিকিৎসার কারণে বর্তমানে আমি অতীতের মতো রাজপথের আন্দোলনে শরিক হতে পারছি না। কিন্তু আমার চিন্তা-চেতনা, ভাবনা-পরিকল্পনার সবকিছুর আবর্তন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ, ও চলমান আন্দোলনকে ঘিরেই।। আপনাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং আন্দোলনের সাফল্য আমার জীবনীশক্তি। একইভাবে আপনাদের ওপর নেমে আসা আঘাত আমাকে শোকাহত করে তুলে। বিএনপির তৃণমূলসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর প্রতি আমার প্রত্যাশা-আমার শারীরিক অনুপস্থিতি যেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আজকের এই ঐতিহাসিক সংগ্রামের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আমার নির্দেশনা থাকবে, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় শত প্রতিকূলতার মাঝে হলেও সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে যেকোনো মূল্যে অব্যাহত রাখুন। সবাই এক হয়ে, আলোচনার মাধ্যমে, সাংগঠনিকভিত্তিকে মজবুত করে, নিজ নিজ এলাকার জনগণকে একাত্ম করে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। আমাদের প্রতিটি অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সকল সদস্য যদি আন্দোলনে আন্তরিকভাবে শরিক হন। ইনশাল্লাহ পৃথিবীর কোনো শক্তির পক্ষে আমাদেরকে দমিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
তারেক বলেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যারা ৫ জানুয়ারির কলঙ্কিত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন, নিজ চোখে সরকারের কারচুপি ও অরাজকতা দেখেছেন তাদেরকে আমি অনুরোধ করব, বিবেকের কাছে সততা নিয়ে প্রশ্ন করুন আপনারা কাদের পক্ষ হয়ে, কাদের বিপক্ষে কাজ করছেন? আপনাদের দায়বদ্ধতা কি জনবিচ্ছিন্ন, সমর্থনহীন সরকারের প্রতি; নাকি নিষ্পেষিত গণমানুষের প্রতি? দেশের অর্ধেকেরও কম আসনে অনুষ্ঠিত ন্যাক্কারজনক নির্বাচনে যখন শতকরা ৫ ভাগেরও কম ভোট পড়ে। অর্থাৎ সমগ্র দেশের শতকরা ২ ভাগেরও কম মানুষ যখন ৫ বছরে একবারের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। সেই ভোটারদের আবার প্রায় সবাই যখন হয় অবৈধ সরকারের জাল ভোটার, দলীয় কর্মী ও ক্যাডার বাহিনীর সদস্য, তখন দেশের জন্য নেওয়া শপথের সম্মানে হলেও আপনাদের উচিত নিজেদের কর্তব্য ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ে নতুন করে ভাবার।
তিনি আরো বলেন, আমার উদাত্ত আহ্বান, দেশবাসীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে এগিয়ে চলা এই আন্দোলনে যার যার অবস্থান থেকে সবাই সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। দেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটিকে, প্রতিটি বাড়িকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করুন। একাত্তরে আমরা এভাবেই দেশকে হানাদারমুক্ত করেছিলাম। সেই সংগ্রাম ছিল স্বাধীনতা অর্জনের। আর আজকের এই সংগ্রাম সার্বভৌমত্ব রক্ষার। সেই সংগ্রাম ছিল দেশকে হানাদার-মুক্ত করার। আর আজকের এই সংগ্রাম দেশে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার।