১৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০১:১০

মেয়েটা আমার কোলেই ছিল, কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না: নিহত সোহার মা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেয়েটা আমার কোলেই ছিল, কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না: নিহত সোহার মা

নিহত শিশু সোহা

‘মেয়েটা আমার কোলেই ছিল। হঠাৎ যখন জোরে শব্দ পাই, তখন মেয়েটাকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু মেয়েটাকে বাঁচাতে পারলাম না।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের (পঙ্গু হাসপাতাল) বেডে শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত নাজমা আক্তার। এই দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তার দুই বছর দুই মাস বয়সী মেয়ে আদীবা আক্তার সোহাকে।

এদিন ভোরে তূর্ণা নিশিথা ও উদয়ন এক্সপ্রেসের সংঘর্ষের এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন নাজমা আক্তারের পরিবারের আরও তিন সদস্য। এর মধ্যে নাজমা আক্তারের স্বামী মহিন আহমেদ সোহেল ও চার বয়সী ছেলে নাফিজুল হক নাফিজ চিকিৎসাধীন পঙ্গু হাসপাতালেই। নাজমার খালা রেনু (৪৫) আহত হয়েছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানালেন নাজমা আক্তার।

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে মাত্র পাঁচ দিন আগেই স্বামীকে হারানো জাহেদা খাতুনের (৪৫) প্রাণ। তবে এখানেই শেষ নয়। তার মা সুরাইয়া খাতুন (৬৫) এবং তিন সন্তানের সবাই আহত হয়েছেন এই দুর্ঘটনায়।

পঙ্গু হাসপাতালে নাজমা আক্তারের পাশের বেড়ে শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন জাহেদা খাতুনের মা সুরাইয়া খাতুন। জাহেদার ছেলে ইমনের কোমড়ের হার ভেঙে গেছে। পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি ইমন তীব্র ব্যথায় কথাই বলতে পারছে না।

জাহেদার দুই মেয়ে সুমি ও মীমের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এর মধ্যে সুমিকে প্রথমে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত থাকায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চিকিৎসাধীন ছিল মীম, তাকেও পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। জাহেদার চার সন্তানের মধ্যে কেবল সুমনই হতাহতের শিকার হওয়া থেকে বেঁচে গেছেন।

সুরাইয়া খাতুনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাড়ি আখাউড়া। মেয়ে জাহেদা খাতুনকে বিয়ে দিয়েছিলেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার গাজীপুর এলাকার রামনগরের মুসলিম মিয়ার সঙ্গে। চট্টগ্রামে জাহাজ কাটা শিল্পে কাজ করতেন তিনি। চাকরি সূত্রে বাস করতেন চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে। মুসলিম মিয়া পাঁচ দিন আগেই মারা যান। সে কারণেই মা সুরাইয়া খাতুন ও সন্তানদের নিয়ে শ্রীমঙ্গল গিয়েছিলেন জাহেদা খাতুন। সেখানে মুসলিম মিয়ার দাফন প্রক্রিয়া শেষে সোমবার রাতে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসে রওনা দেন তারা। পাঁচ দিন আগে স্বামীকে হারানো জাহেদা দুর্ঘটনাস্থলেই মারা যান। ট্রেনে তার সঙ্গে থাকা বাকি সবাই এখন হাসপাতালে লড়াই করছেন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে।

সুরাইয়ার এক স্বজন সানি জানান, জাহেদার আরেক ছেলে সুমনও ট্রেনে ছিলেন জাহেদাদের সঙ্গেই। তবে দুর্ঘটনার সময় তিনি অন্য বগিতে ছিলেন বলে তিনি অক্ষত রয়েছেন।

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের (পঙ্গু হাসপাতাল) অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনার পর আমাদের এখানে এখন পর্যন্ত ৯ জন রোগী এসেছেন চিকিৎসা নিতে। শুরুর দিকে দুই-তিনজনের অবস্থা একটু গুরুতর ছিল। তবে এখন সবার অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবাই সেরে উঠবেন বলে আশা করছি। সুমি নামের এক রোগীর মস্তিষ্কে আঘাত ছিল বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। সে কারণে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, সেও খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর