জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আমাদের দেশের নারী ও কন্যাশিশুরা পুষ্টির অভাবের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার। বর্তমানে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থলে যৌন হয়রানি রোধে কমিটি গঠনের জন্য হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য স্থানে যৌন হয়রানি করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনায় কিছু নেই। তাই সর্বক্ষেত্রে যৌন হয়রানি রোধে একটি সমন্বিত আইন প্রণয়ন হওয়া দরকার। আমরা মনে করি, যৌন হয়রানি, নারী ও কন্যাশিশুদের বিকাশের পথে একটি বড় অন্তরায়। নারী ও কন্যা শিশুরা সুরক্ষিত না থাকলে পুরুষরাও সুরক্ষিত থাকতে পারে না, জাতি সুরক্ষিত থাকে না।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আজ জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
‘নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে একটি সমন্বিত আইন প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি। বক্তব্য রাখেন অপরাজেয় বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র-এর সভাপতি নাছিমুন আরা হক মিনু, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ-এর প্রটেকশান প্রজেক্ট ম্যানেজার ফারজানা মেহরীন, ফ্রি-ল্যান্স গবেষক মোহাম্মদ আজাদ প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে নাছিমা আক্তার জলি বলেন, বর্তমানে নারী ও শিশুদের প্রতি ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের কন্যাশিশু ও নারীরা পথে-ঘাটে, যানবাহনে, বাজারে পাবলিক প্লেসে, এমনকি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বাসা বাড়িতে হরহামেশা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। শুধু কন্যাশিশুরাই নয়, ছেলে শিশু ও প্রতিবন্ধী নারীসহ সকল বয়সী নারীর প্রতিও ঘটছে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা এবং নানাবিধ যৌন হয়রানি।
তিনি আরও বলেন, নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি সমন্বিত আইন প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি। ২০০৯ সালে হাইকোর্ট কর্তৃক নির্দেশনামূলক নীতিমালায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থলে যৌন হয়রানী প্রতিরোধ ও প্রতিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু যৌন হয়রানি কেবলমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থলেই ঘটছে না। এর পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। পথে-ঘাটে, যানবাহনে, খেলার মাঠে তথা সকল জনপরিসরে, এমনকি গৃহের অভ্যন্তরেও যৌন হয়রানীর ঘটনা ঘটছে। তাই ২০০৯ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনা যথেষ্ট নয়।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও গার্লস অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্সের সহায়তায় পরিচালিত একটি নমুনা জরীপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, পাবলিক প্লেসে ৯৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ নারী ও কন্যাশিশু এক থেকে একাধিকবার যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। জরীপে অংশ গ্রহণকারী ৩৯২ জন উত্তরদাতার মধ্যে ৩৮৪ জনই বলেছেন, তারা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন, যা আমাদের জন্য একটি ভয়াবহ ইঙ্গিত। উত্তরদাতা নারীর শতকরা ৫৯.৪৫ ভাগ বলেছেন যে, তারা তাদের ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যেই জীবনে প্রথমবারের মত যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। তবে লক্ষণীয় এবং উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, এদের মধ্যে শতকরা ৫.৪৭ ভাগ নারী ৬ বছর বয়সের পূর্বেই এবং ১৫.২৬ ভাগ নারী ১০ বছরের পূর্বেই জীবনে প্রথম যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। উত্তরদাতা ৫.৮৮ শতাংশ নারী নিকটাত্মীয় দ্বারা, ২৬.১৭ শতাংশ পরিচিত ব্যক্তি দ্বারা এবং ৬৭.৯৫ শতাংশ নারী অপরিচিত ব্যক্তি দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার