রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, দেশকে আরও এগিয়ে নিতে অবশ্যই জাতীয় ঐক্যে চাই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, ৫০হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যাকারী, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোনদিন ঐক্য হতে পারে না। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে শুধু বিএনপি নয়, সকল দলকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মেনেই করতে হবে। না মানলে সেসব দলের স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। অপরদিকে বিরোধী দলের সদস্যরা দুর্নীতি বিরোধী ট্রাইবুনাল গঠনের দাবি জানান।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে আজ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, সরকারি দলের আসলাম হোসেন সওদাগর, বেগম মোছাঃ শামীমা আক্তার খানম, এম এ মতিন, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, হাসিবুর রহমান স্বপন, কাজী নাবিল আহমেদ, সেলিমা আহমাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, গণফোরামের মোকাব্বির খান, বিএনপির মোশাররফ হোসেন প্রমূখ।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমরা ওয়াজ মাহফিলের বিরোধী নই। তবে ধর্মের দোহাই দিয়ে, পবিত্র কোরআনের অপব্যাখ্যা দিয়ে এখনও অনেকস্থানে যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ব্যাংকিংখাতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে হবে। দূর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। উন্নয়ন-অগ্রগতি সবাইকে ধরে রাখতে হবে। মুজিববর্ষে সবাইকে প্রতিজ্ঞা নিতে হবে- যার যার দল তার, কিন্তু দেশের উন্নয়ন সবার।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কূটনৈতিকভাবে দেশকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল। স্বাধীনতাবিরোধী ও গণহত্যাকারীদের মন্ত্রী করেছিল, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীকে ওআইসিতে মহাসচিব প্রার্থী করে মাত্র তিনটি ভোট পেয়েছিল। দেশের জন্য এটা কতটা লজ্জার সেটা বোঝার ক্ষমতাও তাদের ছিলনা।
তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই রাজনৈতিক ঐক্য চাই, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী, ৫০ হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যাকারী বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোনদিন ঐক্য হতে পারে না।
বিএনপির মোশাররফ হোসেন কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি জানিয়ে বলেন, সারাদেশে গণতন্ত্রহীনতা, শাসনহীনতা চলছে। বড় বড় ব্যাংক লুটেরারা, হত্যাকারী, সন্ত্রাসীরা জামিন পেলেও মাত্র দুই কোটি টাকার মামলায় বিএনপি নেত্রীকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, তার জীবন এখন সঙ্কটাপন্ন। প্রধানমন্ত্রী একজন সফল প্রধানমন্ত্রী, একজন মা। শত প্রতিকুলতা নিজ হাতে মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাই দয়া করে, ৭৪ বছর বয়সী বিএনপি নেত্রীকে মুক্তি দিন।
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ড. কামাল হোসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত স্নেহ ও আস্থাভাজন ছিলেন। যত বেশি ভিন্ন মতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল হবো, সংসদ তত প্রাণবন্ত হবে। গণফোরাম বঙ্গবন্ধুকে মেনেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। ড. কামাল হোসেন মাত্র আট মাসে জাতিকে সংবিধান উপহার দিতে পেরেছিলেন। আন্তর্জাতিক আদালতে বিভিন্ন মামলায় বিনা পারিশ্রমিকে তিনি বারবার বাংলাদেশকে বিজয়ী করেছেন। তিনি দেশের শেয়ার বাজার ও ব্যাকিংখাতের দুর্নীতি বন্ধে একজন অবসর প্রাপ্তবিচারপতির নেতৃত্বে দূর্নীতি বিরোধী ট্রাইবুনাল গঠনের দাবি জানান।
ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বঙ্গবন্ধুই আমাদের জাতির পিতা, এটা নিয়ে অন্য কথা জাতি সহ্য করবে না। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ভারতের অনেক নেতা আঙ্গুল তুলে দেখাতে চায়, বাংলাদেশ ইসলামিক রাষ্ট্র। কিন্তু মুজিববর্ষে আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষতার পথ থেকে বিচ্যুত হবে না।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন