২৬ আগস্ট, ২০২০ ১১:৫০

রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু হওয়ার তিন বছর পূর্তিতে যা বললো যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু হওয়ার তিন বছর পূর্তিতে যা বললো যুক্তরাষ্ট্র

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বর্বরোচিত আচরণে নিজের বসতভিটা ছাড়তে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের তিন বছর পূর্তির দিন ২৫ আগস্ট একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই বিবৃতিতে এমন মানবতা-বিরোধী অপরাধে লিপ্তদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং ভিকটিমদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছে তারা।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মরগ্যান ওরট্যাগাস প্রদত্ত এই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাখাইন স্টেটে মিয়ানমার জান্তার অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সংঘাত হতে সংশ্লিষ্টদের বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে। রোহিঙ্গাদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় সংলাপ শুরু করা দরকার বলেও মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রাখাইনে এখনও হত্যাযজ্ঞ চলছে, হাজার হাজার মানুষকে গৃহত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে, আর এমন জঘন্য অপতৎপরতা চলতে থাকায় দেশত্যাগীদের স্বেচ্ছায় নিজ বসতভিটায় ফেরার আগ্রহকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। শান্তির প্রত্যাশাও দূরীভূত হচ্ছে।
আমরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি নিরাপদে স্বেচ্ছায় মর্যাদার সাথে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে নিজ বসতভিটায় ফিরতে আগ্রহী হয়-এমন পরিবেশ তৈরির জন্যে। এমনকি, যারা প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারেই স্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে, গৃহত্যাগী এসব রোহিঙ্গারাও স্বতস্ফূর্তভাবে নিজ এলাকায় ফিরতে পারেন সে ধরনের সুশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের স্বার্থেই মিয়ানমারকে সবকিছু করতে হবে।

২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং গৃহত্যাগ করে মিয়ানমারের অন্যত্র আশ্রয়গ্রহণকারীদের ত্রাণ-সহায়তা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ৯৫১ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা ৮ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানের জন্যে বাংলাদেশের মানবিক দায়িত্ববোধের প্রশংসার কথা পুনরুল্লেখ করতে চাই। একইসাথে সভ্যবিশ্বের প্রতি আহবান জানাচ্ছি রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক-মহায়তা অব্যাহত রাখার জন্যে। সাথে সাথে এ সংকটের স্থায়ী সমাধানেও সকলকে আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের দুর্দশার জন্যে দায়ীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে রয়েছে মানবাধিকার হরণ এবং গণহত্যা ও বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়ার সাথে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ এবং ভিসা সুবিধা রহিত করা হয়েছে। জাতিসংঘের তদন্ত-প্রক্রিয়াকে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দিছেছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক বিচার-আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারকে অংশগ্রহণের তাগিদ দেয়া হচ্ছে এবং আদালতের নির্দেশ পালনেও মিয়ানমারকে চাপ দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা নিধনের ষড়যন্ত্রে লিপ্তদের বিচারের কাঠগড়ায় তুলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সংঘবদ্ধ যে চেষ্টা চালানো হচ্ছে তাতেও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিচ্ছে। কারণ, মানবতা অটুট রাখতে এমন আচরণে লিপ্তদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর বিকল্প নেই।

বিবৃতিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বৈরাচারি-স্বেচ্ছাচারিতার চির-অবসানে রাখাইন স্টেটের রোহিঙ্গাদের চলমান আন্দোলনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। কারণ, এর মধ্য দিয়েই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রসার এবং বহুল প্রত্যাশিত সামাজিক-শান্তি স্থাপনের পথ সুগম হবে।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর