২৮ নভেম্বর, ২০২১ ১১:১৮

৩৪ বছরের রেওয়াজ ভেঙে ফোবানায় মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

৩৪ বছরের রেওয়াজ ভেঙে ফোবানায় মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা

ফোবানার সম্মাননা প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ । ছবি-বাংলাদেশ প্রতিদিন।

৩৪ বছরের ফোবানার ইতিহাসে এই প্রথম বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানালো হলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে চলতি ৩৫তম ফোবানা সম্মেলনের সকল কার্যক্রমকে উৎসর্গ করার পরিপ্রেক্ষিতে মূলমঞ্চের আলো ঝলমল পরিবেশে কেবলই ধ্বনিত হচ্ছে ‘অদম্য বাংলাদেশ-অবাক বিশ্ব’ স্লোগান। তবে আগের সম্মেলনসমূহে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দূরের কথা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানেরও সুযোগ ছিল না। 

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বখ্যাত ‘গ্যালোর্ড ন্যাশনাল রিসোর্ট এ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার’র ২৬ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনদিনের এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক এমপি। একইমঞ্চে ‘মুক্তিযোদ্ধাগণকে সম্মাননা’ জানানো হয়। মন্ত্রী নিজেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় তাকে মেডেল পরিয়ে সম্মানিত করেন ফোবানার পক্ষে সাবেক চেয়ারম্যান, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক-বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবী। বিপুল করতালির মধ্যে বিশেষ এই পর্বের সঞ্চালনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি শামীম চৌধুরী। 

সম্মাননা স্মারক প্রদানের পর প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাকে উত্তরীয় পরিয়ে দিন মন্ত্রী মোজাম্মেল হক। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে ছিলেন লাবলু আনসার, রাশেদ আহমেদ, হারুন অর রশীদ এবং ড. নুরুন্নবী। এ সময় নিজের অনুভ’তি ব্যক্তকালে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এখন সেই মহানায়কের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুৃর স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনায় কাজ করছি। এরচেয়ে পরম সৌভাগ্যের আর কী হতে পারে। মন্ত্রী উল্লেখ করেন, একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা এখনও নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সকলকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। 

ফোবানার এই সম্মেলনের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, প্রবাসীরা হচ্ছেন বাংলাদেশের আসল রাষ্ট্রদূত। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় প্রবাসীদের ব্যাপারে সজাগ রয়েছেন। আমরাও সাধ্যমত সহায়তার দিগন্ত প্রসারিত রেখেছি। ফোবানার মত বিশাল একটি প্ল্যাটফরম থেকে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম হচ্ছে-তা সকলের জন্যেই অহংকারের একটি অধ্যায়। ৫০ বছরে বাংলাদেশ যতটা এগিয়েছে, সেই ধারা অব্যাহত রাখতে দেশপ্রেমিক প্রতিটি প্রবাসী আন্তরিকতাপূর্ণ সহায়তা দিয়ে যাবেন বলে আশা করছি। 

এ সময় প্রবাসীদের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার বলেন, ২৫ বছরের অধিক সময়ের দাবির পরিপূরক হিসেবে ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কন্স্যুলেট অফিস খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কন্সাল জেনারেলও এসেছেন। এভাবেই শেখ হাসিনা ও তার সরকার যে ‘প্রবাস-বান্ধব’ তা দৃশ্যমান হচ্ছে। এখন প্রবাসীরা অধির আগ্রহে রয়েছেন নিজস্ব ভবনে নিউইয়র্কে কন্স্যুলেট অফিস স্থাপনের নির্দেশটির বাস্তবায়নে। নিউইয়র্ক অঞ্চলের ৫ লক্ষাধিক প্রবাসী চাচ্ছেন এমন একটি ভবনে কন্স্যুলেট স্থাপিত হবে যেখানে থাকবে একটি মিলনায়তন, গবেষণা কেন্দ্রসহ লাইব্রেরী-যে ভবনের নাম হবে ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’। 

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বেশ কটি সেমিনার হয়েছে। সবগুলোতে সমৃদ্ধির পথে ধাবিত বাংলাদেশ নিয়ে পর্যালোচনামূলক আলোচনা হয়েছে। ‘বিজনেস নেটওয়ার্ক’ এ বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারি মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেন মজেনা নিজের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে জোর দিয়ে বলেছেন, ‘এশিয়ায় উদিয়মান টাইগার’ হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের কাতারে উঠার সংকল্পও অপূর্ণ থাকবে না যদি বর্তমানের নেতৃত্ব অব্যাহত থাকে এবং রাজনৈতিক স্থিতি অটুট রাখা সম্ভব হয়। 

এই নেটওয়ার্কে জর্জিয়া স্টেটের সিনেটর ( ডেমক্র্যাট) শেখ রহমানও বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেন এবং রাজনীতিকদের আরো নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান। আলোচনায় অংশ নিয়ে ফোবানার সাবেক চেয়ারম্যান ড. নুরুন্নবী, ফোবানার চেয়ারপার্সন জাকারিয়া চৌধুরী অভিন্ন ভাষায় বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের অপূর্ণ সুযোগই শুধু নয়, বিদেশী বিনিয়োগকারিদেরকে দেয়া হচ্ছে ট্যাক্স রিবেটসহ নানা সুযোগ। প্রবাসীরাও তা পাচ্ছেন। 

আই-গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর আবুবকর হানিফ বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশকে আরো উদারতা প্রদর্শন করতে হবে। প্রবাসের দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্নদেরকেও জাতীয় উন্নয়নে সম্পৃক্ত হবার প্রত্যাশা পূরণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। উন্নয়ন-অভিযাত্রায় রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্দ্ধারনীতে ভিন্ন মতের এক্সপার্টদেরকেও স্থান দেয় দরকার। সমগ্র জনগোষ্ঠিকে উন্নয়নের ধারায় একিভ’ত করা সম্ভব হলে আর কোন শক্তিই বাংলাদেশকে পিছিয়ে নিতে সক্ষম হবে না। 

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম বলেছেন, বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে নিজস্ব অর্থ দিয়ে। এটি সম্ভব হচ্ছে প্রবাসীদের রেটিটেন্স এবং দেশমাতৃকার সার্বিক কল্যাণে আন্তরিক সহযোগিতায়। ফোবানার এই সম্মেলনেও একই চেতনা আমাকে অভিভূত করেছে। 

আয়োজক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ইনারা ইসলাম, সদস্য-সচিব শিব্বির আহমেদ, কবির পাটোয়ারি, পারভিন পাটোয়ারি, ড. ফাইজুল ইসলামের সমন্বয়ে ফোবানার এই সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নিচ্ছেন ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর