শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ

সংগৃহীত ১৭০০ পুঁথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করেছিলেন

সাহিত্য ডেস্ক

সংগৃহীত ১৭০০ পুঁথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করেছিলেন
আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ প্রথম জীবনে সাহিত্যবিষয়ক নিবন্ধ রচনা শুরু করেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম তৎকালীন শিল্প-সাহিত্যের বিদগ্ধ সমাজের মনোযোগ আকর্ষণ করে। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান ছিল তাঁর বিশেষ আগ্রহের বিষয়। সারা জীবন তিনি প্রাচীন বাংলা পাণ্ডুলিপি (পুঁথি) সংগ্রহ করেন।

আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ ছিলেন ব্রিটিশ ভারত ও পাকিস্তানের একজন বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি সাহিত্যিক, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা এবং প্রাচীন বাংলা পুঁথির সংগ্রাহক ও ব্যাখ্যাকার। বৃহত্তর চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সুচক্রদণ্ডী গ্রামে তাঁর জন্ম। আবদুল করিম ১৮৯৩ সালে পটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৮৯৫ সালে চট্টগ্রামে মিউনিসিপ্যাল স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তারপর একাধিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার পর তিনি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে চাকরি নেন এবং এক পর্যায়ে বিভাগীয় স্কুল পরিদর্শক পদে উন্নীত হন। ১৯৩৪ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন।

আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ প্রথম জীবনে সাহিত্যবিষয়ক নিবন্ধ রচনা শুরু করেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম তৎকালীন শিল্প-সাহিত্যের বিদগ্ধ সমাজের মনোযোগ আকর্ষণ করে। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান ছিল তাঁর বিশেষ আগ্রহের বিষয়। সারা জীবন তিনি প্রাচীন বাংলা পাণ্ডুলিপি (পুঁথি) সংগ্রহ করেন। ১৯২০-২১ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ তাঁর রচিত বাংলা পুঁথির তালিকা বাঙালা প্রাচীন পুঁথির বিবরণ শিরোনামে দুইখণ্ডে প্রকাশ করে। তাঁর সংগৃহীত পুঁথির বেশিরভাগ মুসলমান কবিদের লেখা। তাঁর সংগৃহীত ১৭০০ পুঁথি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করেছিলেন, যেগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে। হিন্দু কবিদের লেখা অবশিষ্ট পুঁথিগুলো রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরকে দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত পাণ্ডুলিপিগুলোর একটি সুবিন্যস্ত তালিকা ‘পুঁথি পরিচিতি’ শিরোনামে প্রকাশ করেছে।

আবদুল করিম এগারোটি প্রাচীন বাংলা গ্রন্থ সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। ‘ইসলামাবাদ’ শিরোনামে তিনি চট্টগ্রামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি গ্রন্থও রচনা করেন। ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হকের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি ‘আরাকান রাজসভায় ‘বাঙালা সাহিত্য’ শীর্ষক আরেকটি গ্রন্থ রচনা করেন। এসবই পাণ্ডিত্যপূর্ণ রচনা। তার সংগৃহীত মুসলমান কবিদের রচিত পাণ্ডুলিপিগুলো থেকে জানা যায় যে, সেকালের মুসলিম মনীষীরা বাংলা সাহিত্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। দৌলত কাজী, আলাওল, সৈয়দ সুলতান, মুহম্মদ খান প্রমুখ শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবিদের অন্যতম বলে গণ্য। যাদের নাম ও রচনা সম্পর্কে আগে কিছুই জানা যায়নি এমন প্রায় ১০০ জন মুসলমান কবিকে তিনি পরিচিত করেন। তাঁদের রচনা থেকে প্রমাণিত হয়, বাংলা মুসলমানদেরও ভাষা ছিল।

নদীয়া সাহিত্য সভা তাঁকে ‘সাহিত্যসাগর’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে এবং চট্টল ধর্মমণ্ডলী তাঁকে ‘সাহিত্য বিশারদ’ উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি বরাবরই শেষোক্ত খেতাবটি পছন্দ করতেন এবং নিজ নামের সঙ্গে তা ব্যবহার করতেন। আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ আজীবন বাংলা সাহিত্যের উন্নয়ন ও বিকাশে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছিলেন।

সর্বশেষ খবর