একটি সিগারেট পুরুষদের জীবনের ১৭ মিনিট এবং নারীদের ২২ মিনিট কমিয়ে দেয়। এমনটাই জানিয়েছে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) এক নতুন গবেষণা। আগের ধারণা ছিল একটি সিগারেট গড়ে ১১ মিনিট জীবনের সময় হ্রাস করে। তবে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এই ক্ষতি আরও বেশি।
গবেষণাটি যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণ বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত হয়। এতে সিগারেটের ভয়াবহতা তুলে ধরে জানানো হয়, ধূমপানের অভ্যাস মানুষের মূল্যবান সময় এবং সুস্থ জীবন কেড়ে নিচ্ছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিটি সিগারেট একজন মানুষের জীবন থেকে গড়ে ২০ মিনিট কেড়ে নেয়। এক প্যাকেট সিগারেট (২০টি) একটি মানুষের ৭ ঘণ্টা সময় কমিয়ে দেয়। ধূমপায়ীরা যদি বছরের শুরুতে সিগারেট ত্যাগ করেন, তবে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এক সপ্তাহের জীবন ফিরে পেতে পারেন। আর পুরো বছর এভাবে চললে ৫০ দিন জীবন রক্ষা পাবে।
গবেষণার অন্যতম লেখক ড. সারাহ জ্যাকসন বলেন, মানুষ জানে ধূমপান ক্ষতিকর, তবে কতটা ক্ষতি করে তা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। গড়ে ধূমপায়ীরা ১০ বছরের মূল্যবান জীবন হারান, যা পরিবার এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটানোর বিশেষ সময়।
গবেষণায় আরও জানানো হয়, ধূমপান কেবল জীবনকাল কমায় না, বরং সুস্থ জীবনের মধ্যবর্তী বছরগুলোকেও ধ্বংস করে। জীবনযাত্রার শেষ দিকে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা বা অক্ষমতা নিয়ে কাটানোর সময় ধূমপানে বাড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, তামাকের এই মহামারি প্রতিবছর ৮০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটায়। এর মধ্যে ১৩ লক্ষ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।
গবেষণা স্পষ্ট করে বলেছে, ধূমপানের কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। দিনে এক সিগারেট খেলেও হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি সেই ব্যক্তির প্রায় অর্ধেক, যারা দিনে ২০টি সিগারেট খান। তাই পূর্ণ স্বাস্থ্যের জন্য সিগারেট ত্যাগই একমাত্র উপায়।
বিশ্বজুড়ে ১৩০ কোটি মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বসবাস করেন, যেখানে তামাকজনিত অসুস্থতা এবং মৃত্যুর বোঝা সবচেয়ে বেশি।
ধূমপান ত্যাগ করা মানে শুধু একটি জীবন বাঁচানো নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ জীবনযাত্রার দিকে এগিয়ে যাওয়া। গবেষকরা নতুন বছরে সিগারেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যা একটি স্বাস্থ্যকর এবং দীর্ঘ জীবন নিশ্চিত করবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল