নাসা মহাকাশ থেকে এক বিস্ময়কর ছবি প্রকাশ করেছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আকাশজুড়ে যেন এক বিশাল হাত ছড়িয়ে আছে। প্রায় ১৫০ আলোকবর্ষ জুড়ে বিস্তৃত এই দৃশ্য তৈরি হয়েছে এক শক্তিশালী পালসার ও তার চারপাশের নীহারিকা থেকে।
প্রথমবার এ ধরনের ছবি ধরা পড়ে ২০০৯ সালে নাসার চন্দ্র এক্স-রে মানমন্দিরে। তখন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এক পালসার এবং তার নীহারিকাকে মানুষের হাতের মতো আকৃতিতে দেখতে পান। এরপর থেকে বিভিন্ন টেলিস্কোপ দিয়ে এর পর্যবেক্ষণ চলছে।
সর্বশেষ ছবিতে নাসা চন্দ্র এক্স-রে টেলিস্কোপের তথ্যের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার টেলিস্কোপ ‘অস্ট্রেলিয়া টেলিস্কোপ কমপ্যাক্ট অ্যারের রেডিও তথ্য যুক্ত করেছে। এতে বিস্ফোরিত এক তারকা ও তার চারপাশের পরিবেশকে নতুনভাবে দেখা গেছে। ছবিতে অনেক সূক্ষ্ম অংশও ফুটে উঠেছে, যা আগে ধরা পড়েনি।
ছবির কেন্দ্রে রয়েছে পালসার B1509-58। এটি একটি নিউট্রন তারা (অত্যন্ত ঘন তারার অবশিষ্ট অংশ, যা মহাতারকার বিস্ফোরণ বা সুপারনোভা থেকে তৈরি হয়)। এর ব্যাস মাত্র ১৯ কিলোমিটার মতো হলেও এটি ঘূর্ণায়মান অবস্থায় প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৭ বার পাক খায়। এর চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১৫ ট্রিলিয়ন গুণ বেশি শক্তিশালী। এ কারণে একে গ্যালাক্সির সবচেয়ে শক্তিশালী তড়িৎ-চৌম্বক শক্তির উৎসগুলোর একটি ধরা হয়।
এই পালসারের শক্তি থেকে তৈরি হয়েছে নীহারিকা MSH 15-52। উচ্চশক্তির কণার স্রোত এ নীহারিকা তৈরি করেছে, যার আকৃতি অনেকটা হাতের মতো। এক্স-রে আলোয় এটি হাতের তালু ও আঙুল প্রসারিত অবস্থায় দেখা যায়।
রেডিও পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, নীহারিকার চৌম্বক ক্ষেত্র বরাবর সূক্ষ্ম রেখা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পালসার থেকে বের হওয়া কণার স্রোত মূল বিস্ফোরণের ধ্বংসাবশেষে আঘাত হেনেই এসব রেখা গড়ে তুলেছে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, এক্স-রে-তে দেখা কিছু অংশ রেডিও তরঙ্গে দেখা যায়নি। যেমন নিচের দিকে থাকা জেট (দ্রুত বের হওয়া কণার ধারা) বা উপরের দিকে থাকা তিনটি “আঙুলের” ভেতরের অংশ। নাসার মতে, এটি সম্ভবত পালসারের আশপাশে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ধাক্কার তরঙ্গ (শক ওয়েভ) থেকে বের হওয়া কণার প্রভাব।
এই পর্যবেক্ষণ আরও এক বিশেষ তথ্য দিয়েছে। কাছেই রয়েছে সুপারনোভা অবশেষ RCW 89। এর গঠন বেশ অস্বাভাবিক। এতে খণ্ড খণ্ড রেডিও সিগন্যাল দেখা যায়, যা এক্স-রে ও অপটিক্যাল আলোয় ধরা পড়া আলোকবিন্দুর সঙ্গে মিলে যায়।
নাসার নতুন ছবি মহাকাশ গবেষকদের জন্য এক বিরল সুযোগ এনে দিয়েছে। এটি শুধু বিস্ফোরিত তারকার রহস্য উন্মোচন করছে না, বরং মহাকাশে শক্তিশালী পালসার কীভাবে আশপাশকে প্রভাবিত করে তা-ও স্পষ্ট করে তুলছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল