নাসার মঙ্গলগ্রহের পারসিভিয়ারেন্স রোভার তোলা একটি ছবি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ছবিটিতে আকাশে একটি উজ্জ্বল নলাকার (সিলিন্ডার আকৃতির) বস্তু দেখা গেছে। অনেকেই ধারণা করছেন এটি ধূমকেতু ৩আই/অ্যাটলাস (3I/ATLAS)। আবার কেউ কেউ বলছেন এটি হয়তো কোনো ভিনগ্রহী মহাকাশযান।
ছবিটি তোলার পর নাসার বিজ্ঞানীরা জানান, মঙ্গলের আকাশে দেখা উজ্জ্বল বস্তুটি আসলে একটি ধূমকেতু, যার গতিবেগ প্রায় প্রতি সেকেন্ডে ৬০ কিলোমিটার এবং ব্যাস প্রায় ৪৬ কিলোমিটার। এটি ৩ অক্টোবর মঙ্গলগ্রহের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছবিতে বস্তুটি নলাকার দেখা গেলেও তা আসলে চিত্র ধারণের সময় বেশি এক্সপোজার (দীর্ঘ সময় আলো ধরা) ব্যবহারের কারণে হয়েছে। বাস্তবে এর এমন আকৃতি নয়।
মহাকাশপ্রেমী স্টেফান বার্নস ও সিমিয়ন শমাউস নাসার প্রকাশিত ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে ধূমকেতুটির উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন বলে দাবি করেন। বার্নস নয় মিনিটের কয়েকটি ছবি একত্রে ভিডিও আকারে তৈরি করেন, যেখানে বস্তুটিকে দ্রুতগতিতে আকাশে চলতে দেখা যায়। শমাউসও একই সময়ে আকাশের নির্দিষ্ট স্থানে একটি ম্লান আলোর রেখা শনাক্ত করেন। তাদের মতে, এটি মঙ্গল থেকে দেখা ৩আই/অ্যাটলাস ধূমকেতুর প্রথম দৃশ্য হতে পারে।
এই ধূমকেতুটি ২০২৫ সালের ১ জুলাই প্রথম নাসা শনাক্ত করে। এটি এখন পর্যন্ত তৃতীয় আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূমকেতু, যা আমাদের সৌরজগৎ অতিক্রম করছে। এর আগে ২০১৭ সালে ‘ওউমুয়ামুয়া’ এবং ২০১৯ সালে ‘২আই/বোরিসভ’ ছিল এ ধরনের ভিনগ্রহীয় ধূমকেতু।
হার্ভার্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যাভি লোয়েব দাবি করেছেন, ৩আই/অ্যাটলাস হয়তো কোনো ভিনগ্রহী গোয়েন্দা প্রোব হতে পারে। তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানী এই ধারণা উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, এটি প্রকৃতির স্বাভাবিক ধূমকেতু, যার অস্বাভাবিক গতি ও পথপ্রবাহ প্রাকৃতিক কারণেই হয়েছে।
নাসা ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ) আশ্বস্ত করেছে, এই ধূমকেতুটি পৃথিবীর জন্য কোনো বিপদ নয়। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১৭০ মিলিয়ন মাইল দূর দিয়ে অতিক্রম করবে, যা চাঁদ থেকে পৃথিবীর দূরত্বের চার গুণেরও বেশি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৩আই/অ্যাটলাস একটি একমুখী ধূমকেতু—এটি আমাদের সৌরজগৎ অতিক্রম করে আবার আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশে ফিরে যাবে। ফলে এটি পৃথিবীর ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।