সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সেপ্টেম্বর মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৫৯ জন নারী ও কন্যা শিশু। এর মধ্যে ওই এক মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৫ জন। সোমবার হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)-এর মাসিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১ জনকে, যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ২০ জন।
এছাড়া পারিবারিক সহিংসতায় নিহত ৩৯ জন, আত্মহত্যা ২৩ জন, আহত হয়েছেন ১৮ জন। যৌতুকজনিত সহিংসতায় নিহত ২, আহত ১ জন। ওই মাসে ১৩৩ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ মধ্যে ২৫ জন নিহত ও ১০৮ জন শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার।
এইচআরএসএস জানায়, রংপুরের হারাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্তৃক অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা শিশু অধিকার লঙ্ঘনের জ্বলন্ত উদাহরণ। দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রে সব স্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। এ ছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা প্রতিরোধে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।
সাংবাদিক, মানবাধিকার রক্ষাকারী ও সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সীমান্তে প্রাণহানি বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা আবশ্যক।প্রতিবেদনে সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত, সাংবাদিক নির্যাতন, মব সহিংসতা, ধর্মীয় ও জাতিগত সহিংসতা, সীমান্ত হত্যাসহ কারাগারে হত্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
রাজনৈতিক সহিংসতা
৩৭টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯ জন, আহত ২৬৮ জন। এর মধ্যে, বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ২৪টি ঘটনায় নিহত ৭, আহত ১৯২ জন; বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে ৭টি ঘটনায় নিহত ১, আহত ৪২ জন; বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষে ৩টি ঘটনায় আহত ৩২ জন; এবং অন্যান্য দলের মধ্যে ৪টি ঘটনা।
অতিরিক্তভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের ওপর দুষ্কৃতকারীদের হামলায় আরো ৯ জন নিহত (আওয়ামী লীগ ৩, বিএনপি ৪) এবং ৬ জন আহত হয়েছেন। আধিপত্য বিস্তার, কমিটি গঠন, সমাবেশ কেন্দ্রিক বিরোধ, চাঁদাবাজি ও দখল কেন্দ্রিক সহিংসতা এর মূল কারণ।
সাংবাদিক নির্যাতন
সেপ্টেম্বরে সাংবাদিক নির্যাতনের ৩২টি ঘটনায় মোট ভুক্তভোগী ৪২ জন। এর মধ্যে নিহত ১, আহত ২০, লাঞ্ছিত ৯, হুমকিপ্রাপ্ত ৬ এবং ৩টি মামলায় ৬ জন অভিযুক্ত। খুলনার অভিজ্ঞ সাংবাদিক ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলু (চ্যানেল ওয়ান, ভোরের কাগজ) নিহত হন এবং কক্সবাজারে তরুণ সাংবাদিক মোহাম্মদ আমিন ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হন।
মব সহিংসতা (গণপিটুনি)
সেপ্টেম্বরে ২৮টি মব বা গণপিটুনির ঘটনায় নিহত ২৪ জন, আহত ২১ জন। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফেনীতে পৃথক ঘটনায় দুজন মানসিক প্রতিবন্ধী ও নিরীহ ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
ধর্মীয় ও জাতিগত সহিংসতা
৮টি ঘটনায় ২টি মন্দিরে হামলা, ২০টি প্রতিমা ভাঙচুর এবং ৫টি মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ ঘটে। খাগড়াছড়ির গুইমারায় পাহাড়ি কিশোরী ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’র অবরোধে সেনাবাহিনীর গুলিতে ৩ জন পাহাড়ি নিহত ও অনেকে আহত হন।
সীমান্ত সহিংসতা
ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে আহত দুজন, গ্রেপ্তার ১৩ জন, এবং ১৩২ জন বাংলাদেশিকে পুশ-ইন করা হয়। অপরদিকে, আরাকান আর্মি বঙ্গোপসাগর থেকে ৫টি ট্রলারসহ ৪০ জন বাংলাদেশি জেলেকে আটক করে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু
হেফাজতে ৪ জন, গুলিতে ৪ জন, মোট ৮ জন নিহত। এ ছাড়া দুজন পুলিশ-র্যাবের তাড়া খেয়ে পানিতে ডুবে মারা যান। কারাগারে মারা গেছেন ৫ জন আসামি।