পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক-এফওসিতে অংশ নিতে গতকাল ঢাকায় এসেছেন তুরস্কের পররাষ্ট্র সচিব বেরিস একিন্চি। ঢাকায় নেমেই বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। এসব বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে এবং প্রতিরক্ষা শিল্প স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। এদিকে আজ চতুর্থবারের মতো পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ঢাকা-আঙ্কারা। তুরস্কের পক্ষে বেরিস একিন্চি ও বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন।
গতকাল সকালে ঢাকায় নেমে প্রথমেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তুরস্কের পররাষ্ট্র সচিব বেরিস একিন্চি। দুপুর ২টায় গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন তারা। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জিয়াউর রহমানের সময় থেকে। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় করার জন্য সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যবসা-বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে কথা হয়েছে। তুরস্ক বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ জন্য তুর্কি-বাংলাদেশ চেম্বারকে আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে কথা হয়েছে। এর পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবার মতো তুরস্কও নির্বাচনের পর নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে উদগ্রীব।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশে যৌথ প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ে তোলার জন্য তুরস্ক বাংলাদেশ সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে। সেই বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে, সেটা আমাদের পক্ষ থেকে বলেছি।
এরপর দুপুর সাড়ে তিনটায় রাজধানীর বসুন্ধরায় জামায়াত আমিরের বাসভবনে ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন তুরস্কের পররাষ্ট্র সচিব। বৈঠককালে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, নির্মাণ, কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সহযোগিতার সুযোগ, দক্ষ জনশক্তি উন্নয়নে যৌথ উদ্যোগের সম্ভাবনা, দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের গুরুত্ব, তুরস্কের উন্নয়ন ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হলে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন জামায়াত আমির। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর অতীত কঠিন সময়ের প্রসঙ্গ এবং জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পাওয়া ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সবশেষ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন বেরিস একিন্চি। এ সময় দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান মো. জাকারিয়া, মনিরা শারমিন, ড. আতিক মুজাহিদ, যুগ্ম সদস্যসচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ ও সৈয়দা নীলিমা দোলা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ছয় বছর পর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ঢাকা-আঙ্কারা। আজ মঙ্গলবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাণিজ্য-বিনিয়োগের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উভয় দেশের সামগ্রিক সম্পর্ক নিয়ে পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকে আলোচনা হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে জোর দেবে ঢাকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বেড়েছে। বৈঠকে এ বিষয়ের সঙ্গে জ্বালানি, কৃষি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে আলোচনা হবে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের পতনের পর বাংলাদেশে নয়াদিল্লির প্রভাব কমেছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে আঙ্কারা। তারা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আধিপত্যের পাশাপাশি মুসলিম রাষ্ট্রে বলয় সৃষ্টি করতে চায়। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারি নিতে চায় তুরস্ক। একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে সামরিক ড্রোন বানানোর কারখানা স্থাপন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং অন্যান্য সমরাস্ত্র তৈরির যৌথ উদ্যোগের বিষয়ে আগ্রহী ঢাকা। এ ছাড়াও সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী।