‘রং চটা জিন্সের প্যান্ট পরা, জ্বলন্ত সিগারেট ঠোঁটে ধরা, লাল শার্ট গায়ে তার বুক খোলা, সানগ্লাস কপালে আছে তোলা, রাখনা কেন ঢেকে ঐ দুটি চোখ, হেই যুবক’-এ গানটি দিয়েই সুখ্যাতি পেয়েছিলেন ডলি সায়ন্তনী। ফিতা-ক্যাসেটের সেই যুগে এ গানটি তাকে এনে দিয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা, যা আজও ডলি ভক্তদের মুখে মুখে ফিরে। আশির দশকের শেষের দিকে গানের জগতে আসার পর ডলির প্রথম অ্যালবামের এ গানটি জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর এটি ১৯৯২ সালে ব্যবহার করা হয় শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘উত্থান পতন’ সিনেমায়; সেখানেও গানটি হিট তকমা পায়। এ সিনেমায় রুবেল-মিশেলা জুটির সঙ্গে পর্দায় ভিলেন হুমায়ুন ফরীদির দুর্দান্ত অভিনয় আর ডলি সায়ন্তনীর ‘রং চটা জিন্সের প্যান্ট পরা’ গান যেন অসাধারণ কম্বিনেশন!
গানটির গীতিকার-সুরকার কে?
ডলির এ গানটির গীতিকার-সুরকার ক্রেডিট নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। কোথাও গীতিকার-সুরকার হিসেবে রয়েছে মিল্টন খন্দকারের নাম, আবার কিছু সূত্রে মনিরুজ্জামান মনিরের নাম। জানা যায়, সে সময় এ দুজনই খোকনের ছবিতে নিয়মিত কাজ করতেন। তবে গানটির সংগীত পরিচালনা করেছেন আলম খান, এটা নিয়ে দ্বিমত নেই কারও। আধুনিক ও পপধর্মী এই গানটি বাংলা সিনেমার একটি হার্টথ্রব গান।
সাহসী সুরে ডলির উত্থান
ডলি সায়ন্তনীর জন্য এটি ছিল এক ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা। এ সময় তিনি মেলোডি থেকে বেরিয়ে একটু পপ ঘরানার দিকে ঝুঁকেছিলেন। গানটি তার কণ্ঠের আধুনিকতা ও নারীর আত্মবিশ্বাসকে সামনে এনে দেয়- যা পরবর্তী প্রজন্মের গায়িকাদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। তার তীক্ষ্ণ, প্রাণবন্ত কণ্ঠস্বর সেই সময়ের মূলধারার নারীকণ্ঠ থেকে আলাদা এক সুর এনে দেয়। গানের কথায় যেমন ছিল শহুরে যুবকের স্টাইল, তেমনি ছিল এক নতুন প্রজন্মের মনোভঙ্গির প্রকাশ-ফ্যাশন, স্বাধীনতা আর একরাশ দুঃসাহসের প্রতীক। সময় বদলেছে, কিন্তু এখনো ইউটিউবে বা সামাজিক মাধ্যমে গানটি ঘুরে-ফিরে আসে।
নব্বইয়ের নতুন হিরোর ভাষা
‘রং চটা জিন্স, সানগ্লাস, সিগারেট-এ যেন নব্বইয়ের এক নতুন হিরোর ভাষা। ঢাকাই সিনেমা তখন গ্রাম থেকে শহরের গল্পে পা রাখছে। যখন ঢাকাই চলচ্চিত্রে ‘মডার্ন হিরো ইমেজ’ অর্থাৎ শহুরে, স্টাইলিশ, বিদ্রোহী যুবক চরিত্র জনপ্রিয় হচ্ছিল। একই সময়ে শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘উত্থান পতন’ ছবিতে রুবেল-মিশেলার রসায়নের সঙ্গে দর্শক পেলেন এক ভিন্ন স্বাদের গান- ‘রং চটা জিন্সের প্যান্ট পরা’। গানটিতে ডলি সায়ন্তনী গলা ছিল উজ্জ্বল, সাহসী আর খানিকটা বিদ্রোহী-ঠিক যেমন গানের চরিত্রটি। গানের লিরিক্সে ছিল শহুরে তরুণের আত্মবিশ্বাস, স্টাইল আর স্বাধীন মানসিকতার প্রতিচ্ছবি। ‘রং চটা জিন্স’, ‘খোলা বুক’, ‘সানগ্লাস’- এ শব্দগুলো যেন সে সময় ঢাকাই ফিল্মের নতুন যুগের ঘোষণা হয়ে ওঠে। রুবেলের স্টাইল, মিশেলার উপস্থিতি, আর ডলির কণ্ঠ-মিলেমিশে যেন সময়ের প্রতীক।
তখনকার ফ্যাশন ট্রেন্ডে এর প্রতিফলন
নব্বইয়ের দশকে ঢাকার তরুণদের ফ্যাশনে রং চটা জিন্স, হাফ শার্ট, সানগ্লাস, লম্বা চুল ছিল এক ধরনের পরিচয়। গানটি সেই ট্রেন্ডকে পর্দায় জীবন্ত করে তোলে। নায়ক রুবেলের সেই ‘রাফ অ্যান্ড স্টাইলিশ’ ইমেজ শহরের তরুণদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণের মডেল।