এ টি এম বললেন, মসজিদে যাচ্ছি। লোকটি বলল, জুমার নামাজ পড়ে আপনার লাভ কী? জীবনে এত আকাম করেছেন বুঝতে পারছেন না? আপনি একটা বাজে লোক। ‘সিনেমায় আমাকে দেখে তারা খারাপ ভেবেছে, এতেই আমার আনন্দ’- এ টি এম শামসুজ্জামান এক সাক্ষাৎকারে কথাটি বলেছিলেন
অভিনয়ে সাফল্য লাভ করলেও প্রয়াত এ টি এম শামসুজ্জামান হতে চেয়েছিলেন সাহিত্যিক। বিখ্যাত লেখক-সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সত্যেন সেন, রণেশ দাসগুপ্ত, উদয়ন চৌধুরী, খালেদ চৌধুরী প্রমুখ ব্যক্তির সংস্পর্শ এবং অনুপ্রেরণা তাঁকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসে। প্রায় শতাধিক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার এবং তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। ভালোমন্দ দুই ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন তিনি। মন্দ চরিত্রে অভিনয় এমনভাবে বিশ্বাসযোগ্য হতো যে, মাঝেমধ্যে তাঁকে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। এক দিন জুমার দিনে গোসল করে পাজামা-পাঞ্জাবি পরে যখন মসজিদে যাচ্ছিলেন তখন এক লোক এ টি এম শামসুজ্জামানকে জিজ্ঞাসা করলেন- কোথায় যাচ্ছেন? এ টি এম বললেন, মসজিদে যাচ্ছি। লোকটি বলল, জুমার নামাজ পড়ে আপনার লাভ কী? জীবনে এত আকাম করেছেন বুঝতে পারছেন না? আপনি একটা বাজে লোক। ‘সিনেমায় আমাকে দেখে তারা খারাপ ভেবেছে, এতেই আমার আনন্দ’- এ টি এম শামসুজ্জামান এক সাক্ষাৎকারে কথাটি বলেছিলেন। পাড়ায় নাটকের মহড়া হচ্ছে। অনেক মানুষের ভিড়। কিন্তু বালক এ টি এম শামসুজ্জামানকে কেউ ঢুকতে দিচ্ছে না। এক দিন বুদ্ধি করে তিনি নাটকের শিল্পীদের চা খাওয়ানোর কথা বলে চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকে পড়লেন মহড়াকক্ষে। এক দিন এক কাণ্ড হলো- প্রমোটার আসেননি। এ সুযোগটি নিলেন এ টি এম শামসুজ্জামান। প্রমোটারের কাজ শুরু করলেন। হয়ে গেলেন নাটকের একজন। চলচ্চিত্রে কাজের আশায় এ টি এম শামসুজ্জামান পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর কাছে গেলেন। তিনি ৫০০ পৃষ্ঠার একটি পাণ্ডুলিপি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, তাড়াতাড়ি তিনটি কপি করে নিয়ে এসো। এ টি এম রাত জেগে খুব খেটে ১২ দিনের মধ্যেই তিনটি কপি করে জমা দিলেন। উদয়ন চৌধুরী দেখে প্রশংসা করে বললেন, দারুণ হয়েছে। তারপর তিনটি পাণ্ডুলিপিই তিনি ময়লার বাক্সে ছুড়ে ফেলে দিলেন। এ টি এম অবাক। উদয়ন চৌধুরী বললেন, আমি তোমার ধৈর্যশক্তির পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলাম। তুমি পরীক্ষায় পাস করেছো। তুমি এখন থেকে আমার তিন নম্বর সহকারী। সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন শুনেই এ টি এম শামসুজ্জামানের বাবা প্রচণ্ড রেগে গেলেন। তিনি ছেলেকে গলাধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। তিনি কাপড়চোপড় নিয়ে সোজা চলে গেলেন উদয়ন চৌধুরীর কাছে। ১৯৭৬ সাল, এ টি এম শামসুজ্জামানকে খোঁজছেন নির্মাতা আমজাদ হোসেন। চিত্রগ্রাহক রফিকুল বারী চৌধুরীকে দিয়ে খবর পাঠালেন। আমজাদ হোসেন বললেন, ‘নয়নমণি’ বানাব। আপনি মোড়লের চরিত্রে অভিনয় করবেন। এ টি এম হাসবেন না কাঁদবেন বুঝতে পারলেন না। বললেন, ‘ভাই, আমার চেহারা না-হয় ভালো না, তাই বলে ভরা মজলিসে মশকরা করেন কেন?’ আমজাদ হোসেন হেসে বললেন, ‘মজা নয়। একজন ভয়ংকর মোড়লের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে এটি ভাবতেই ভয় পেয়ে গেলেন তিনি। ‘আসি’ বলে পালিয়ে গেলেন। রফিকুল বারীকে দিয়ে তাঁকে ধরিয়ে আনা হলো। আমজাদ হোসেন বললেন, আপনার ভয়ের কিছু নেই, আমি যেভাবে বলব সেভাবে শুধু ক্যামেরার সামনে অভিনয় করে যাবেন। হলোও তাই। ‘নয়নমণি’ মুক্তি পেল। আবারও ভয়ে পালিয়ে গেলেন এ টি এম শামসুজ্জামান। কারণ ছবিতে তাঁর অভিনয় দেখে দর্শক যদি গালি দেয়। কিন্তু ছবি সুপারহিট এবং এ টি এমের দক্ষ অভিনয় দর্শকমনে ব্যাপক সাড়া জাগালো। এ ছবিতে তাঁর মুখের ‘ওই মিয়ারা’ সংলাপটি মানুষের মুখে মুখে ফিরল। আমজাদ হোসেন আবার এই সুখবর দিতে তাঁকে ধরে আনালেন। তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এই সাফল্যের বিষয়টি। এই এক সিনেমা দিয়েই দর্শকের নয়নের মণি হয়ে উঠলেন এ টি এম শামসুজ্জামান। একটি বেসরকারি টিভিতে শুটিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন এ টি এম। জসিমের সঙ্গে একটা ফাইট সিকোয়েন্স ছিল। জসিম হালকা করতে বলেছিলেন- ‘ভাই, এটা কোনো ব্যাপারই না। আমি আপনাকে ঘুসি দেওয়ার আগেই পড়ে যাবেন।’ কিন্তু হলো তার উল্টোটা। জসিম ফাইটে পাঞ্চ দেওয়ার সময় পড়ে যাওয়ার বদলে এ টি এম মুখ এগিয়ে দেন ভুল করে। অতএব, জসিমের ইয়া বড় ঘুসিতে এ টি এমের নাক ছানাবড়া...’।