আবারও তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। এবার বাগযুদ্ধে লিপ্ত দুই দেশের সেনাবাহিনী। পাকিস্তানকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার হুমকি দিয়েছেন ভারতের সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানকে রাষ্ট্রীয় মদদে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে, না হয় ইতিহাসে এবং ভূগোলে তাদের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে। হুঁশিয়ারি দেন বিমানবাহিনীর প্রধান অমর প্রীত সিং-ও।
এ ‘উস্কানিমূলক বক্তব্যে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে’ বলে ভারতের প্রতি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছে। পাকিস্তান আইএসপিআর বলছে, মনগড়া অজুহাত তৈরি আঞ্চলিক অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে। পাকিস্তান সাফ জানিয়ে দিয়েছে আগ্রাসন চালানো হলে দ্রুত ও চূড়ান্ত জবাব দেওয়া হবে। ভারতের ‘সবচেয়ে গভীর অঞ্চল’ পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম পাকিস্তান। ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ‘উস্কানিমূলক ও যুদ্ধংদেহী’ বক্তব্য দক্ষিণ এশিয়াকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
শনিবার ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানায়, এমন মন্তব্য ‘কৃত্রিম অজুহাত তৈরি করে আগ্রাসনের পথ প্রশস্ত করতে পারে’।
এর একদিন আগে ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান অমর প্রীত সিং দাবি করেন, মে মাসের সংঘর্ষে পাকিস্তানের পাঁচটি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছে ভারত। এসব যুদ্ধবিমান এফ-১৬ ও জেএফ-১৭ শ্রেণির। তিনি বলেন, আমাদের কাছে দীর্ঘ পাল্লার এক হামলার প্রমাণ আছে এবং আমাদের সিস্টেম অনুযায়ী এফ-১৬ ও জেএফ-১৭ শ্রেণির পাঁচটি যুদ্ধবিমান আমরা নামিয়েছি। তবে তিনি এ দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ দেননি।
পাকিস্তান আইএসপিআর জানায়, এই বক্তব্যগুলো আবারও ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ভারত আগ্রাসনের জন্য অযৌক্তিক অজুহাত তৈরি করতে চাইছে। বিবৃতিটি এমন সময়ে আসে যখন মে মাসে দুই দেশের মধ্যে চারদিনের সশস্ত্র সংঘর্ষের পর ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে।
শনিবারের বিবৃতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় অভিযোগ আনে। তারা বলে, ভারত বহুদিন ধরে নিজেকে ভুক্তভোগী হিসেবে উপস্থাপন করে আসছে, অথচ বাস্তবে দক্ষিণ এশিয়া ও এর বাইরে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে ও সন্ত্রাসবাদ ছড়াচ্ছে। আইএসপিআর দাবি করে, এই মিথ্যা বয়ান এখন ভেঙে পড়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন বুঝতে পারছে যে, ভারতই সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের আসল চেহারা এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার কেন্দ্রবিন্দু।
আইএসপিআর স্মরণ করিয়ে দেয়, এ বছরের শুরুর দিকে ভারতীয় আগ্রাসন দুই পরমাণু শক্তিধর দেশকে ‘একটি বড় যুদ্ধের কিনারায় নিয়ে গিয়েছিল।’ তারা ভারতের নেতৃত্বের সমালোচনা করে বলে, ভারত যেন নিজেদের যুদ্ধবিমান ধ্বংস ও পাকিস্তানের দীর্ঘপাল্লার প্রতিরোধ ক্ষমতার ধ্বংসযজ্ঞ ভুলে না যায়।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনা কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক মন্তব্যের জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সতর্ক করে বলেছে, নতুন কোনও শত্রুতার সূত্রপাত হলে তা ‘বিধ্বংসী বিপর্যয়’ ডেকে আনবে। আইএসপিআর বলেছে, পাকিস্তান পিছু হটবে না এবং কোনও দ্বিধা বা সংযম ছাড়াই দৃঢ় প্রতিক্রিয়া জানাবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যারা নতুন ‘স্বাভাবিকতা’ প্রতিষ্ঠার কথা বলছে, তাদের জানা উচিত— পাকিস্তান ইতোমধ্যেই নিজেদের একটি নতুন প্রতিক্রিয়া নীতি স্থাপন করেছে, যা হবে দ্রুত, চূড়ান্ত ও বিধ্বংসী।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করে, তাদের সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণ উভয়েই সক্ষম ‘শত্রুর ভূখণ্ডের প্রতিটি কোণায় যুদ্ধ নিয়ে যেতে’ এবং ভারতের ‘ভৌগোলিক নিরাপত্তার মিথ’ চূর্ণ করতে। তারা সতর্ক করে বলে, যদি পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, তবে মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়ার হুমকি পারস্পরিক হয়ে যাবে।’
মে মাসের সংঘর্ষ ছিল দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। এটি শুরু হয় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগাঁও এলাকায় এক পর্যটকবাহী গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলার পর, যাতে ২৬ জন নিহত হয়। নয়াদিল্লি এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করে। ঘটনার জেরে ভারত তিনদিন ধরে পাকিস্তানের সীমান্তে নির্বিচারে হামলা চালায় এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করে। এরপর পাকিস্তান আত্মরক্ষায় ‘অপারেশন বুনিয়ান-উম-মারসুস’ চালায়, যেখানে পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান— যার মধ্যে তিনটি রাফাল— ও ডজনখানেক ড্রোন ধ্বংস করে। চারদিনব্যাপী এই সংঘর্ষ ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে শেষ হয়।
পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্রগুলো ভারতীয় হুমকিকে ফাঁপা গর্জন বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, আমরা জানি ভারতকে কীভাবে সামলাতে হয়। প্রয়োজনে আগের চেয়ে কঠোর জবাব দেওয়া হবে। সূত্রগুলো আরও জানায়, সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যয় বেড়েছে। ভারত যদি আবার ‘চিকিৎসা’ চায়, আমরা সেটি দিতে প্রস্তুত বলে তারা মন্তব্য করে।
নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানায়, আফগানিস্তানের মাটি এখনও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে, যদিও সন্ত্রাসী ঘাঁটির তথ্য বারবার কাবুল সরকারকে জানানো হয়েছে। এ বছর পাকিস্তানের পাল্টা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে ১১৮ জন আফগান-সংযুক্ত জঙ্গি নিহত হয়েছে। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, জিও টিভি
বিডি প্রতিদিন/একেএ