প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে কর্মচারীদের মধ্যে কাজের প্রতি অমনোযোগিতা ও শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। সিদ্ধান্তহীনতার কারণেও ঝুলে থাকছে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দাপ্তরিক কাজে ধীরগতি ও সমন্বয়হীনতা রয়েছে। সচিবালয়ে কাজে গা-ছাড়া ভাবের কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সবাই তাকিয়ে আছে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে প্রশাসনিক কাজে গতি আসবে বলছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে কাজের ক্ষেত্রে সবার মধ্যেই রয়েছে একধরনের অনীহা। সামনে নির্বাচন নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে নানা আগ্রহ। সচিবালয়ের বাইরে বিভিন্ন দপ্তর-অধিদপ্তরেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। কেউ দায়িত্ব নিয়ে কোনো কাজ করতে চাচ্ছেন না। অফিসে আসছেন যাচ্ছেন, রুটিন কাজ করছেন। অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ হিসেবে বিভিন্ন পদে রদবদল করেছে। তবে কর্মকর্তারা যেন স্বস্তি পাচ্ছেন না কাজের ক্ষেত্রে। একাধিক মন্ত্রণালয়ে সচিবের পদ খালি। অনেক মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিব প্রয়োজন অনুসারে নেই। একজন সামলাচ্ছেন একাধিক অতিরিক্ত দায়িত্ব। তবু কর্মকর্তা দিতে পারছে না জনপ্রশাসন। বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরপ্রধান নিয়োগ দিতে পারছে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ নিয়োগ রদবদলের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা দেখা যাচ্ছে। কোনো মন্ত্রণালয় সকালে সিদ্ধান্ত দিয়ে বিকালেই আবার পরিবর্তন করছে।
সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, যে ফাইলটি অতি জরুরি সেটি নিয়ে কাজ হচ্ছে। যেটি এ মুহূর্তে দরকার নেই কদিন পরে হলেও চলবে সেটি পড়ে থাকছে। স্থানীয় সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, যেখানে প্রকল্প আছে সেখানে তদবির আছে, মানুষের ভিড় আছে। যে মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প কম সেখানে সবই কম। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, হাজারো মানুষের আনাগোনা থাকত সেটি কমে গেছে। কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাপও কমেছে। যে যেখানে আছে সেখানেই নির্বাচন পর্যন্ত থাকতে স্বস্তিবোধ করছেন। মন্ত্রণালয়গুলোতে কাজের গতি কমেছে সে কথা বলেছেন খোদ ছাত্রপ্রতিনিধিদের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, এক মাস ধরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, ছাত্র উপদেষ্টারা নেমে যাবেন। গুঞ্জনের পর থেকে ছাত্র উপদেষ্টাদের দপ্তর কাজ করা বন্ধ করে দিছে এক মাস ধরে। কাজ শ্লথ হয়ে গেছে। আমলাদের ভাবনা তুলে ধরে উপদেষ্টা আরও বলেছেন, তারা ভাবেন ওনারা (ছাত্র উপদেষ্টা) চলে যাবেন; আরেকজন আসবেন। তার সঙ্গে কাজ করব আমরা। আমলারা বসে আছেন কখন পরবর্তী সরকার আসবে। বিশেষ করে, জুনে যখন লন্ডনে ঘটনা (তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক) ঘটল, তারপর দেশের পুরা ‘ল্যান্ডস্কেপ’ পরিবর্তন হয়ে গেল। ৬নং ভবনের এক দায়িত্বশীল সচিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন হলে দেশে একটি রাজনৈতিক সরকার আসবে। এই সরকারের কাজের দায়ভার অনেক সময় ওই কর্মকর্তাকে খেসারত দিতে হয়। এ কারণে প্রো-অ্যাকটিভ হয়ে কাজে নেই অনেকে। যতটুকু কাজ না করলেই নয় সেভাবে হয়তো করছেন অনেকে। ১৫ ব্যাচের এক সচিব বলেন, সচিবালয়ে কাজের গতি কম এটা ঠিক। আমার মনে হয় শুধু সচিবালয়েই নয় পুরো সিস্টেমেই কাজের গতিতা কমেছে। একটি সরকার পালানোর পর অনেকে কিছু দেখে অনেকেই এখন দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। এখন একটি ভালো নির্বাচন করতে যা প্রয়োজন সে মোতাবেক কাজগুলো হচ্ছে বেশি। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব এ কে এম আউয়াল মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সচিবালয়ে কাজের গতি কম অনেকেই বলে, বিষয়টি আমিও শুনেছি। তবে কাজের গতি কমানো ঠিক হয়নি। কে ক্ষমতায় আসবে এসব চিন্তা করে আমলাদের কাজ করার দরকার নেই। বরং কাজটা এগিয়ে রাখলে পরবর্তী সরকারের জন্য সহজ হয়। কর্মকর্তাদের এই সময়ে কাজে কেন ভয় থাকবে সে প্রশ্নও রাখেন এই সাবেক কর্মকর্তা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল